উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি পরীক্ষা নেয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এবার কোভিড ১৯-এর কারণে নতুন পদ্ধতিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হবে। এজন্য এবার শিক্ষার্থী ভর্তির জন্যও নতুন কৌশল ঠিক করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এমন কৌশল নির্ধারণ হবে জটিল এবং স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের ঐকমত্য দুরূহ হবে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন উপাচার্য।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হবে তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও উপাচার্যরা গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল সভায় বসেন। এতে বিভিন্ন প্রস্তাব করা হলেও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ শনিবার উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বৈঠক হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আমাদের সময়কে জানান, বৃহস্পতিবারের সভায় অনেকগুলো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। ইউজিসি চাচ্ছে এ বছর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি। এটি অনেক দিনের আলোচনা। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এতে রাজি নয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে নতুন পদ্ধতির এইচএসসির ফলের কারণে পুরো ভর্তি পদ্ধতিরই সংস্কার করা হতে পারে। যা অনেকটা জটিল বিষয়। স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ চাহিদামতো নম্বর-গ্রেড ঠিক করে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। তবে সবাই একমত হওয়া অনেকটা দুরূহ হবে।
একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নতুন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন হবে। আমাদের আগে জানা দরকার ফলের গ্রেডিং কী হচ্ছে। এখানে টেকনিক্যাল একটা ব্যাপার আছে। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, বিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ, গণিত দক্ষতাগুলো আমরা কীভাবে নেব?
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত কলেজগুলোর মতো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা ছাড়াই কেবল এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যায় কিনা তা নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে উপাচার্যদের সভায় আলোচনা হয়। এ ছাড়া অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার মতো অবকাঠামো আছে কিনা তাও আলোচনায় উঠে আসে। কেননা করোনার কারণে সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাবে কিনা, অনিশ্চয়তা আছে।
এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর সবাই এবার পাস করবেন। ফলে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করবেন। করোনার কারণে যেখানে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়নি, একই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতেও হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা।
অনলাইন ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার মতো সক্ষমতা এখনো নেই বলে মনে করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এতদিনেও ‘গুচ্ছ ভর্তি’ আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এটি এখন সময়ের দাবি, জনগণের দাবি- আমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে। এর কোনো বিকল্প নেই। অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা হলে এতে যুক্ত হওয়া অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব হবে না। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে যদি যেতে পারি, তাহলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই পর্বে পর্বে বিভিন্ন জেলা শহরেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব। যেমন কৃষির একদিন পরীক্ষা, একদিন ‘ক’ ইউনিট, এরপর খ, গ ইত্যাদিতে ভাগ করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।
বর্তমানে দেশে ৪৬টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ জানান, করোনাকালের ভর্তি পরীক্ষা যেন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। এ দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা এবং সময়ের দাবি ‘গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি’। মহামারীর মধ্যে কোনোভাবেই ভর্তি নিয়ে ছেলেমেয়ের ভোগান্তিতে ফেলা যাবে না।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউজিসির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) এবং বুয়েট ছাড়া বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনটি গুচ্ছ করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর মধ্যে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে একটি, সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে আরেকটি গুচ্ছ করে এই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
Leave a Reply