আফগানিস্তানে তাদের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। ওই বিমানে ইরাক, ইরান ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা অভিযানের প্রধান মাইকেল ডি. অ্যান্ড্রু নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার গোয়েন্দারা। ইরানি মিডিয়ার বরাতে জেরুসালেম পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ইরাক, ইরান ও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা অভিযানের প্রধান মাইকেল ডি. অ্যান্ড্রু নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তানের গজনিতে তালেবান মার্কিন বিমান বিধ্বস্ত করলে তিনি মারা যান। রুশ গোয়েন্দারা বলছেন, ভূপাতিত করা বিমানে ছিলেন মাইকেল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের ব্যবহার করা অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি ও নথি তালেবানের হাতে রয়েছে। আইএফপি নিউজের একটি খবরে বলা হয়েছে, ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ডের কুদস ফোর্সের প্রধান লেফটেন্যান্ট কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পেছনে ছিলেন মাইকেল ডি. অ্যান্ড্রু। মধ্যপ্রাচ্যে সিআইএর চেনা মুখ ছিলেন মাইকেল। কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার আগে ইরাকে অন্তত তিন শতাধিক বিক্ষোভকারীকে তার নির্দেশে হত্যা করা হয়।
সোমবার আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশের দেহ ইয়াক জেলায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়, এই এলাকাটিতে তালেবানের শক্ত অবস্থান আছে। তালেবান দাবি করেছে, তাদের গুলিতে মার্কিন বিমানটি ভূপাতিত হয়েছে। এ ঘটনার পর দোহায় তালেবানের সাথে চলমান শান্তি আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিমানটিতে কতজন লোক ছিল বা কেউ নিহত হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার করেনি মার্কিন সামরিক বাহিনী। পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিধ্বস্তের সময় বিমানটিতে পাঁচ জনেরও কম লোক ছিল। আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী বিমানটিতে অন্তত দুইজন লোক ছিল। বিমানটি কিভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তা পরিষ্কার করতে একটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন। বিমানটি শত্রুর গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হয়েছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এক টুইটে কর্নেল সনি লেগেট বলেন, আজ আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে একটি মার্কিন বোম্বাডিয়ার ই-১১এ বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্তের কারণ তদন্তনাধীন আছে আর এ সময় শত্রুর গুলির আঘাতে বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তখন আমরা জানাবো। তিনি বলেন, তালেবানের আরো বিমান বিধ্বস্ত করার দাবি মিথ্যা।
তালেবানের সোসাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিও ফুটেজে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর চিহ্ন থাকা পোড়া একটি বিমানের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে এটিই সেই বিধ্বস্ত বিমান। ভিডিও ও ছবি থেকে বিমানটি বোমারু ই-১১এ বিমানের মতো মনে হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী আফগানিস্তানে নজরদারির জন্য এ রকম বিমান ব্যবহার করে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে গজনির তালেবান নিয়ন্ত্রিত ওই অঞ্চলটিতে একটি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশ পেয়েছে। বিধ্বস্ত বিমানটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরিয়ানা এয়ারলাইনের বলে প্রথমদিকে জানিয়েছিল আফগানিস্তানের কর্তৃপক্ষ, কিন্তু তাদের কোনো বিমান নিখোঁজ হয়নি বলে দ্রুত জানায় আরিয়ানা। আফগানিস্তানে হেলিকপ্টারের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ প্রমাণ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হারানোর ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল। আবার অনেক উঁচু দিয়ে ওড়া বিমান নামিয়ে আনার মতো বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তালেবানের নেই বলেই বিশ্বাস করা হয়। এ ঘটনায় যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি একটি ই-১১এ, পুরো মার্কিন বিমানবাহিনীতে এটিসহ এ ধরনের মাত্র চারটি বিমান ছিল। এই বিমানটি রণক্ষেত্রে থাকা সৈন্যদের সাথে সদর দফতরের যোগাযোগ রক্ষার কাজে ব্যবহৃত হতো এবং মার্কিন বিমানবাহিনীর এক পাইলট বিমানটিকে ‘ওয়াইফাই ইন দ্য স্কাই’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স।
Leave a Reply