করোনার সংক্রমণের ভয়ে সাধারণ অসুখেও শিশুদের চিকিৎসকের কাছে নিচ্ছেন না অনেক অভিভাবক। ফলে করোনাপরবর্তী সময়ে শিশুদের নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের চিকিৎসাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও শিশুরা নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগবে।
এ দিকে জন হপকিনস ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ সম্প্রতি এক গবেষণার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, করোনার এই সময়ে শিশুদের যতটা না মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে, তার চেয়ে আরো বেশি ঝুঁকি রয়েছে করোনাপরবর্তী মহামারী, ক্ষুধা, অপুষ্টি ও অন্য রোগের। অন্য দিকে আগামী ছয় মাসে বাংলাদেশে ২৮ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। স্বাস্থ্য ও পুষ্টিজনিত নানা সমস্যার কারণে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বয়সের এই শিশুদের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ শিশুর মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করার নেপথ্যে বেশ কিছু কারণ এবং তথ্যউপাত্ত তুলে ধরেছে।
সংস্থাটি বলছে, সংক্রমণের ভয়ে বাংলাদেশের অনেক শিশুকে সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও নেয়া হচ্ছে না। করোনার এই সময়ে অনেক শিশু জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় টিকাও পাচ্ছে না। করোনাকালে টিকা গ্রহণের উপযোগী অর্ধেক শিশুই বিভিন্ন রোগের টিকা নিতে পারেনি। ফলে সব মিলিয়ে শিশুরা একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে।
আইইডিসিআরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশু শতকরা তিন ভাগ, যাদের বয়স এক থেকে ১০ বছরের মধ্যে। আর ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে শতকরা সাত ভাগ। যারা মারা গেছে তাদের মধ্যে এক থেকে ১০ বছর বয়সের শূন্য দশমিক ৮২ ভাগ। ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এক দশমিক ৪৯ ভাগ।
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত এমন একটি সূত্র জানায়, করোনার কারণে লকডাউনে প্রথম দিকে তিন মাস পর্যন্ত শিশুদের ১০টি রোগের ছয়টি জীবন রক্ষাকারী টিকা দেয়া বন্ধ ছিল। ওই সময়টাতে অনেক টিকাদান কেন্দ্রই বন্ধ ছিল। আবার যখন টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয় তখন অনেক শিশুর অভিভাবক করোনার কারণে তাদের শিশুদের টিকাদান কেন্দ্রে নেননি।
বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক ডা: সাঈদা আনোয়ার জানান, শিশুরা বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুরা এখন সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব অনেক ভয়াবহ হতে পারে। আর এটা বোঝা যাবে আরো কয়েক মাস পর। চিকিৎসকরাও আবার কেউ কেউ করোনার শুরুতে টিকাদানকে নিরুৎসাহিত করেছেন। কারণ কোনো কোনো টিকা দিলে শিশুদের জ্বর আসে।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) পরিচালক ডা: শামসুল হক জানান, করোনার কারণে শিশুদের বড় একটি অংশ টিকা না নিলেও এখন তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন তো প্রতি মাসেই টিকা দেয়া হয়। মার্চ-এপ্রিলে কিছু সমস্যা ছিল। এখন সবাই তাদের সন্তানদের নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে আসছেন।
Leave a Reply