বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এই ঘোষণা দেন। দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ানডেতে রান খরায় ভুগছেন মুশফিক। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও হাসেনি তার ব্যাট। সবমিলিয়ে শেষ ১৫ ওয়ানডেতে মাত্র ১ ফিফটি করা অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের জাতীয় দলে জায়গা নিয়েই প্রশ্ন উঠছিল। কবে ওয়ানডেকে বিদায় জানাবেন এমন আলোচনাও শুরু হয়েছিল সম্প্রতি। এবার মুশফিক নিজেই ওয়ানডেকে বিদায় বলে দিলেন।
অবসরের ঘোষণা দেওয়া স্ট্যাটাসে মুশফিক লিখেন, ‘আমি আজ থেকে ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর ঘোষণা করছি। আলহামদুলিল্লাহ, সবকিছুর জন্য কৃতজ্ঞ। বিশ্ব ক্রিকেটে আমাদের অর্জন হয়তো সীমিত, কিন্তু এক জিনিস নিশ্চিত—যখনই আমি দেশের জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছি, সর্বোচ্চ ১০০% এর বেশি দিয়ে খেলেছি, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে।গত কয়েকটা সপ্তাহ আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল, আর এই সময়েই আমি উপলব্ধি করেছি—এটাই আমার ভাগ্য।’
তিনি আরও লিখেন, ‘পরিশেষে, আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সেই সমস্ত ভক্তদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই, যাদের ভালোবাসার জন্য আমি গত ১৯ বছর ধরে ক্রিকেট খেলেছি।’
এর আগে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলেন মুশফিক। যেখানে দেশের হয়ে ২৭৪ ওয়ানডে খেলে ৭ হাজার ৭৯৫ রান করেছেন মুশফিক। আছে ৯ সেঞ্চুরি ও ৪৯ ফিফটি। ওয়ানডেতে তার চেয়ে বেশি রান করেছেন শুধু তামিম ইকবাল (৮ হাজার ৩৫৭)।
এদিকে বিদায় বেলায় মুশফিক রেখে গেছেন রেকর্ড, অর্জন আর অনেক কীর্তি। তার দলীয় ট্রফি খুব বেশি নেই, তবে ব্যক্তিগত কীর্তির আলোয় ঝলমলে তার দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছরের অধ্যায়।
জয়ের রেকর্ড
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১২৪ ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন মুশফিক। সাকিব আল হাসান জিতেছেন ১১৭ ম্যাচ, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম ইকবালের জয় ১০৯টি করে।
সর্বোচ্চ চূড়া
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৭৪ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক। আড়াইশ ম্যাচ খেলতে পারেননি আর কেউ। ২৪৭ ম্যাচ খেলে দুইয়ে সাকিব আল হাসান।
বিরামহীন পথচলা
বাংলাদেশের হয়ে টানা সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলার কীর্তি মুশফিকের। ২০১০ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের টানা ৯২ ওয়াডেতে তিনি ছিলেন।
তার আগে রেকর্ডটি ছিল তামিম ইকবালের। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের ২০ জুলাই পর্যন্ত ৮৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন এই ওপেনার।
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মুশফিক
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড মুশফিকের। ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে ৬০ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি ১৪ চার ও ২ ছক্কায়।
দেশের চতুর্থ দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও তার। ৬৯ বলে শতরান ছুঁয়েছিলেন তিনি ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে।
রানে দ্বিতীয়, শতরানে দ্বিতীয়
ওয়ানডেতে ৭ হাজার ৭৯৫ রান করেছেন মুশফিক ৯টি সেঞ্চুরিতে। বাংলাদেশের হয়ে দুটি রেকর্ডেই তার নাম আছে দুইয়ে।
তার ওপরে আছেন কেবল তামিম ইকবাল। মাস দুয়েক আগে অবসরের ঘোষণা দেওয়া ওপেনার ১৪ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৮ হাজার ৩৫৭ রান।
ছক্কায় সেঞ্চুরি
বাংলাদেশের হয়ে ছক্কার সেঞ্চুরি করা তিন ব্যাটারদের একজন তিনি। ঠিক ১০০ ছক্কায় শেষ হলো তার ক্যারিয়ার। তামিম ইকবালের ছক্কা ১০৩টি, মাহমুদউল্লাহর ১০৭টি।
কিপার-ব্যাটারের যুগলবন্দি
২৭৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৬০টিই মুশফিক খেলেছেন উইকেট কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে। এখানে তার ওপরে আছেন ওয়ানডে ইতিহাসে কেবল চারজন কিপার।
এই দ্বৈত ভূমিকায় ৩৬০ ম্যাচ খেলে সবার ওপরে কুমার সাঙ্গাকারা, ৩৫০ ম্যাচ মাহেন্দ্র সিং ধোনির, মার্ক বাউচারের ২৯৪টি ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ২৮২টি।
কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে রান করেছেন মুশফিক ৭ হাজার ২৫৪। এখানে তার ওপরে আছে তিনটি নাম- গিলক্রিস্ট, ধোনি ও সাঙ্গকারা।
কিপিং গ্লাভসে রাজত্ব
উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে ২৪১ ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিক, স্টাম্পিং করেছেন ৫৬টি। দুটি মিলিয়ে মোট ডিসমিসাল তার ২৯৭টি। আলাদা করে এই সবকটিই বাংলাদেশের রেকর্ড। ৯১ ক্যাচ ও ৩৫ স্টাম্পিংয়ে মোট ১২৬ ডিসমিসাল করে আগের রেকর্ড ছিল খালেদ মাসুদের।
তিনের আক্ষেপ
আর মাত্র তিনটি ডিসমিসাল করতে পারলে ওয়ানডে ইতিহাসের পঞ্চম কিপার হিসেবে তিনশ ডিসমিসাল ছুঁতে পারতেন মুশফিক। তাকে থামতে হলো ২৯৭টিতে।
৪৮২ ডিসমিসাল নিয়ে সবার ওপরে কুমার সাঙ্গাকারা, ৪৭২টি অ্যাডাম গিলক্রিস্টের, মাহেন্দ্র সিং ধোনির ৪৪৪টি, মার্ক বাউচারের ৪২৪টি।
পাঁচের জোড়া
এক ওয়ানডেতে পাঁচ ক্যাচ নেওয়া বাংলাদেশের একমাত্র কিপার মুশফিকই। এই কীর্তি তিনি গড়েছেন দুই দফায়। এক ম্যাচে পাঁচটি ডিসমিসাল একাধিকবার করা একমাত্র কিপারও তিনি।
খালেদ মাসুদ একটি ওয়ানডেতে পাঁচটি ডিসমিসাল করেছিলেন। সেখানে ক্যাচ ছিল তিনটি, স্টাম্পিং দুটি।
সেরা জুটি
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা জুটির অংশীদার মুশফিক। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তার জুটিতে এসেছে ৩ হাজার ৫৪৫ রান।
এছাড়া আর কোনো জুটির ৩ হাজার রান নেই। অন্তত ২ হাজার রান আছে আর যে তিনটি জুটির, এর দুটিতেও আছে মুশফিকের নাম।
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার জুটিতে এসেছে ২ হাজার ৫৭৪ রান, তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটিতে ২ হাজার ৮ রান। সবচেয়ে বেশি সাতটি শতরানের বন্ধনও গড়েছেন মুশফিক ও সাকিব।
তিনের সেরা
তৃতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সেরা জুটি রেকর্ডে আছে তার নাম। ২০২২ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে ২০২ রানের জুটি গড়েন তিনি লিটন কুমার দাসের সঙ্গে।
অধিনায়ক
বাংলাদেশকে ৩৭টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন মুশফিক, যা ঠিক তামিম ইকবালের সমান। তাদের চেয়ে বেশি ম্যাচে বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করেছেন আর চারজন।
Leave a Reply