গ্রিন কার্ডধারীদের নতুন করে সতর্ক করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। তাদের বক্তব্য যদি কারও অপরাধমূলক রেকর্ড থাকে এবং তারা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলে তাদের গ্রিন কার্ড বাতিল করে বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হতে পারে।
কাস্টমস এবং সীমান্ত সুরক্ষা (সিবিপি) এক বিবৃতিতে ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এ জানিয়েছে, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী, যদি কেউ এই আইন ভঙ্গ করে বা অপব্যবহার করে, তাহলে সরকারের পক্ষে তার গ্রিন কার্ড বাতিল করার অধিকার আছে।’
এজেন্সিটি আরও জানায়, বৈধ স্থায়ী বাসিন্দারা যদি আগে কোনো অপরাধমূলক দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ধরা পড়েন, তাহলে তাদের বহিষ্কারের আগে আটক করা হতে পারে।
এই সতর্কতা এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান কড়া অভিবাসন অভিযানের প্রেক্ষাপটে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন, লক্ষ লক্ষ অননুমোদিত অভিবাসীকে বহিষ্কার করবেন। হোয়াইট হাউস যেকোনো অবৈধ অভিবাসীকেই ‘অপরাধী’ আখ্যা দিচ্ছে।
শুধু অননুমোদিত অভিবাসীরাই নয়, বৈধ ভিসা ও গ্রিন কার্ডধারীরাও এখন সরকারের কঠোর আইন প্রয়োগের আওতায় পড়ছেন। নিউজ উইক একাধিক রিপোর্টে দেখিয়েছে, কীভাবে অনেক গ্রিন কার্ডধারী এবং আবেদনকারী অভিবাসন অভিযানে আটক হয়েছেন।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিসংখ্যান কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২.৮ মিলিয়ন বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা বা গ্রিন কার্ডধারী যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন।
মার্কিন নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবা (ইউএসসিআইএস) বলেছে, যারা অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেন, তাদের আইনি স্থিতি হারানো ও বহিষ্কারের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে এলিজাবেথ হাউব স্কুল অফ ল-এর সহকারী অধ্যাপক ও ইমিগ্রেশন জাস্টিস ক্লিনিক-এর পরিচালক অ্যামেলিয়া উইলসন জানিয়েছেন, হঠাৎ করে গ্রিন কার্ড বাতিল করার কোনো ক্ষমতা সরকারের নেই, তার জন্য একটি নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।
উইলসন নিউজ উইক-কে বলেন, ‘অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন’ অনুযায়ী আইন স্পষ্ট হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ একতরফাভাবে স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাস বাতিল করতে পারে না। সংস্থাকে আগে ‘প্রত্যাহারের অভিপ্রায়ের নোটিশ’ দিতে হবে, এবং তারপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ইমিগ্রেশন জজের সামনে শুনানির সুযোগ দিতে হবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনে সিবিপি, ইউএসসিআইএস ও আইসিই-এই তিনটি সংস্থা ব্যাপকভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা শুরু করেছে। এতে অননুমোদিত অভিবাসীদের স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগে উৎসাহিত করা, অপরাধমূলক গ্রেপ্তারের তথ্য তুলে ধরা, এবং অতীত প্রশাসনের তুলনায় অনেক বেশি ডিজিটাল উপস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন হামাস-সমর্থিত কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে সন্দেহভাজন বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এবং পুস্তিকা বিতরণের মতো কর্মকাণ্ড।
এই পদক্ষেপ একটি বিস্তৃত নির্বাহী আদেশের অংশ, যা ইহুদিবিদ্বেষ ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সমর্থকদের টার্গেট করছে। এর আওতায় ফিলিস্তিনপন্থী গ্রিন কার্ডধারীরাও অভিযানের শিকার হচ্ছেন।
একটি আলোচিত ঘটনা হচ্ছে, মাহমুদ খলিল নামের এক ফিলিস্তিনি অধিকারকর্মী ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে তার বিশ্ববিদ্যালয় মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনজীবী ও শিক্ষক অ্যামেলিয়া উইলসন বলেন, এই ধরনের বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারের দায়িত্ব হলো স্পষ্ট, নিঃসন্দেহ ও দৃঢ় প্রমাণ উপস্থাপন করা যে, সংশ্লিষ্ট স্থায়ী বাসিন্দার স্ট্যাটাস বাতিল হওয়া উচিত। এবং একমাত্র অভিবাসন বিচারকই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
৯ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক্স-এ বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে হামাস-সমর্থকদের ভিসা ও গ্রিন কার্ড বাতিল করব, যেন তাদের বহিষ্কার করা যায়।
৫ মে ইউএসসিআইএস এক্স-এ জানায়, যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, অনুমোদিত মেয়াদ অতিক্রম করে, বেআইনিভাবে কাজ করে, বা আমাদের দেওয়া সুযোগের শর্ত লঙ্ঘন করে তাহলে তার গ্রিন কার্ড বা ভিসা বাতিল করা হবে।’ সিবিপি এক্স-এ বলেন, গ্রিন কার্ডধারীদের প্রতি সতর্কবার্তা: কারও অপরাধমূলক অতীত থাকলে তিনি আর ‘নমুনা বৈধ বাসিন্দা’ হিসেবে বিবেচিত হন না। গ্রিন কার্ড কোনো অধিকার নয়, এটি একটি সুযোগ মাত্র।
এই প্রতিবেদন স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অভিবাসন নীতিমালার কড়াকড়ি শুধু অননুমোদিত অভিবাসীদের জন্য নয় বৈধ অভিবাসীরাও এখন তীব্র নজরদারির আওতায় রয়েছেন। গ্রিন কার্ডধারীদের জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো আইনি অধিকার ও সুরক্ষার পথ সম্পর্কে সচেতন থাকা।
Leave a Reply