1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে একই পথে হাঁটা আর কতদিন?

ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৭ জুলাই, ২০২০

নাগরিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদা নিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া সবার কাম্য।

কিন্তু সেই যাওয়া যে সুদূরপরাহত, সেই যাওয়ার আশায় থেকে যে চার দশকেরও বেশি সময় চলে গেছে এবং এ দীর্ঘসময়ে বাংলাদেশের আলো-বাতাসে বাস করতে করতে তাদের তৃতীয় প্রজন্ম যে নিজেকে মনে মনে ‘বাংলাদেশি’ ভাবছে এবং স্থানীয় সরকারের তৃণমূল পর্যায়ে বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধি হিসেবে পার্বত্য অঞ্চলের কোনো কোনো ইউনিয়নে দিব্যি রোহিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান/সদস্য রয়েছেন, তা আমাদের স্বীকার করে নিতে এত সংকোচ বলেই আমরা বিকল্প পথ নিয়ে ভাবতে পারি না।

বাংলাদেশের শরণার্থী সমস্যার সমাধানে সহায়তা না করার দায়ে দ্বিপাক্ষিক-ত্রিপাক্ষিক জোট, কিংবা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাদের প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করি না কেন, দিনশেষে উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলে ভূমিধস, অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি, পাচার, উগ্রবাদ ইত্যাদি দুর্ভাবনায় আমাদেরই পড়তে হয়।

তাই আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে গত জানুয়ারি মাসে যারা ভীষণ আহ্লাদে মিয়ানমারের ওপর আমাদের বিজয় মনে করেছিলেন, কয়েক মাসের ব্যবধানে তাদের বোধকরি বোধোদয় হয়েছে যে, এ সমস্যার সমাধানে অন্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে বিকল্প চিন্তার সময় এসেছে। বাংলাদেশের স্বার্থেই।

কারণ রাশিয়া, চীন ও ভারতের মতো ‘মহাশক্তিধর’ রাষ্ট্রের কাছে মানবতার চেয়ে নিজেদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও স্বার্থ অনেক ওপরে। আর রোহিঙ্গা বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্তে মিয়ানমার এখন পর্যন্ত তাদের সমর্থন পেয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতেও পাবে যদি করোনার চেয়েও দাপুটে কিছুর আবির্ভাবে উল্লিখিত ত্রিশক্তির স্বার্থ ও রাজনৈতিক চেতনা প্রভাবিত না হয়।

কাজেই, অঙ্ক যেভাবেই করা হোক না কেন, ‘প্রত্যাবাসন’ শব্দটি বাস্তব কেবল মুখের কথায়, টক শোতে কিংবা ভার্চুয়াল কনফারেন্সে; ‘প্রত্যাবাসন’ বাস্তবায়ন এখনও অনিশ্চিত।

শরণার্থী সমস্যা সমাধানের তৃতীয় পদ্ধতি রিসেটেলমেন্ট বা তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে বাংলাদেশের বাধা কোথায়? ২০০৬-২০১০ সময়ে তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় কানাডা পাঠানোর পর যেসব কারণে এ কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়, তা মোটামুটিভাবে জানা থাকলেও সরকারিভাবে আজও জানানো হয়নি কেন তা বন্ধ হল এবং কেন আবার তা চালু করা সম্ভব নয়।

এমনকি ২০১৮ সালে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে সহায়তার প্রস্তাব দিলেও বাংলাদেশ নীরব থেকেছে। তাদের অফার সীমিতসংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য ছিল বটে, যা বাংলাদেশে বাসরত ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গার তুলনায় খুবই নগণ্য।

কিন্তু ছোট করে হলেও পুনর্বাসনের কাজটি শুরু হতে পারত। নেপালের মতো ক্ষুদ্র সামর্থ্যরে রাষ্ট্রও এক লাখ ভুটানি শরণার্থীকে পুনর্বাসনের মাধ্যমে আমেরিকায় পাঠাতে সক্ষম হয়েছিল।

প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত, কিন্তু অসম্ভব নয়। এটি একদিকে যেমন সত্য, তেমনি এ-ও সত্য যে, একে সম্ভব করতে হলে যে কূটনৈতিক কৌশল দেখানো প্রয়োজন, তার ঘাটতি শুরু থেকেই বাংলাদেশের ছিল। এমন কোনো রাষ্ট্রের সমর্থন কি আমরা আজ পর্যন্ত পেয়েছি, যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে সমর্থনদান ও মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করেছে?

রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন হওয়ার কারণে অসহায়, আর বাংলাদেশ অসহায় অন্য রাষ্ট্রের সমর্থনের অভাবে। সেই সঙ্গে বছর ত্রিশের আগের পুনর্বাসনের নমুনা দেখে যে তিক্ত অভিজ্ঞতা রোহিঙ্গাদের হয়েছে, তাতে কতটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পুনর্বাসন বাস্তবায়ন করলে তাদের পুনর্বাসনে আস্থাশীল করে তোলা যাবে, সে প্রশ্ন রয়েই যায়। অধিকন্তু, মিয়ানমার দোষী সাব্যস্ত হলেই যে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফেরত যেতে পারবে, তেমন নিশ্চয়তা নেই। তাহলে?

আসলে ইতিহাসের দিকে তাকালে দায় চলে যায় যুক্তরাজ্যের দিকে। যারা রোহিঙ্গাদের স্বাধীন-সার্বভৌম আরাকান রাষ্ট্র দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং তা ভঙ্গ করেছিল।

এমনকি ১৮৭২ ও ১৮৯১ সালের গণশুমারি থেকে রোহিঙ্গাদের বাদ রেখেছিল, যা পরে মিয়ানমারের জন্য রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পথ প্রশস্ত করে দেয়। সেই হিসেবে, সবার আগে যুক্তরাজ্যকেই বলা উচিত রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে।

প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক। তবে প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলা সুবিধাজনক হওয়ায় শুধু এদিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ না রেখে এ সমস্যার সমাধানে বিকল্প পথ ধরতে হবে। তৃতীয় কোনো দেশে পুনর্বাসন হতে পারে তেমনি একটি বিকল্প পথ। রোহিঙ্গা সমস্যার উৎস মিয়ানমারে।

এর ফল কিন্তু ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে এবং একটা নৃ-গোষ্ঠীকে যাদের পরিচয় আজ ‘শরণার্থী’। রোহিঙ্গা সমস্যার ভূ-রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক জটিলতার কারণেই এর সমাধান কেবল সুবিধাজনক জায়গায় না খুঁজে বিকল্প চিন্তা করা দরকার।

ড. ইশরাত জাকিয়া সুলতানা : সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ এবং গবেষক, সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com