গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার আজ সোমবার প্রথমবারের মতো ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করবে। এদিন বিকেল ৩টায় বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক ও মূসক (ভ্যাট) বাড়ানো বা কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে। এতে করে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, অন্যদিকে কিছু পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা আছে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য
ব্যবহার কমাতে প্লাস্টিক জাত হোম ও কিচেন ওয়্যারসহ প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের ভ্যাট দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করতে পারে সরকার।
হেলিকপ্টার আমদানি
হেলিকপ্টার আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করা হতে পারে। যার মধ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর থাকছে। এর ফলে হেলিকপ্টারে যাতায়াতে ভাড়া বাড়বে।
কনভেনশন হল, সেন্টার
কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টারের সেবার ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের খরচ বাড়বে।
গাড়ি
একাধিক গাড়ি থাকলে সিসিভেদে ২৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পরিবেশ সারচার্জের বিধান রয়েছে এখন। এটি বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হতে পারে।
রেফ্রিজারেটর
রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এসির ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। মোবাইল ফোনের বিভিন্ন উপকরণ- প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড, চার্জার, ব্যাটারি, হাউজিং, ক্যাসিংসহ অন্যান্য উপকরণে ভ্যাট ২ শতাংশের জায়গায় ৪ শতাংশ করা হতে পারে। এলপিজি সিলিন্ডারের ভ্যাটহার বেড়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।
সিমেন্ট
বাড়বে বাড়ি নির্মাণের খরচ। সিমেন্টশিট উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ, ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয় উৎপাদন পর্যায়ে এক হাজার টাকা প্রতি টন থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা প্রতি টন করা হতে পারে। ফেরো সিলিকন অ্যালয়ের উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি টনে ভ্যাট এক হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৫০০ টাকা করা হতে পারে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সেবা পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। লিফট উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ করা ও নির্মাণ সংস্থার সেবার বিপরীতে ভ্যাট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।
অন্যদিকে ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, গ্রাইন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকারসহ এ জাতীয় পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি ছিল। আসছে বাজেটে এসব পণ্যে ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হতে পারে।
ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার
ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলারের ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্নের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানো হতে পারে।
দাম কমতে পারে যেসব পণ্যের
সয়াবিন ও কাগজ
সয়াবিন মিল কিংবা কাগজশিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল বা উপকরণের ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। পাশাপাশি থাকছে নিউট্রালাইজড সয়াবিন তেলের শুল্ক রেয়াতের প্রস্তাব।
অন্যদিকে নির্মাণ শিল্পের উপকরণ স্থানীয় শিরিশ কাগজ শিল্পের প্রয়োজনীয় ফেনোলিক রেজিন ও স্যান্ডপেপার জাতীয় কাঁচামালের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব বাজেটে থাকছে বলে জানা গেছে।
চিনি
চিনির বাজার দর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখতে বিদ্যমান শুল্ক-কর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারে প্রস্তাবিত বাজেটে চিনির বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টন ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
এলএনজি
প্রস্তাবিত বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়।এ ছাড়া বাইরেও এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়।
জ্বালানি তেল
ক্রুড ফুয়েল অয়েল বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে এবং অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ কমানো হতে পারে। এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে।এ ছাড়া স্থানীয় শিল্প যেমন টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইট উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে প্রস্তাবিত বাজেট।
সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট
সংবাদপত্রের শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক কমানোর প্রস্তাব ছিল নোয়াবসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের। সেই প্রস্তাবে সারা দিতে ও দেশীয় গণমাধ্যমকে আরও সহায়তা দিতে নিউজপ্রিন্ট আমদানির কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব বিবেচনা থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
মাটি ও পাতার তৈরি পণ্য
মাটির ও পাতার তৈরি তৈজসপত্রের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব আসছে। বর্তমানে এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। যা বাজেটে প্রত্যাহারের প্রস্তাব রয়েছে বলে জানিয়েছে এনবিআর সূত্র।
বিদেশি জুস
নন-অ্যালকোহলিক জুস আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বিদেশি জুস মিলতে পারে তুলনামূলক কম দামে।
পিভিসি পাইপ ও কপার ওয়্যার
পিভিসি পাইপ দেশে উৎপাদন করা হলেও এর উপকরণ আমদানি করতে হয়। যেকোনো অবকাঠামোগত কাজেও পিভিসি পাইপের ব্যবহার রয়েছে। ওই পাইপের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকরণের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কপার ওয়্যারেও। এই পণ্যের উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
চামড়া শিল্পে শুল্ক ছাড়
আসছে ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে বড় উপকরণ হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ। এ ছাড়া সারা বছরই সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পে এমন উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা জরুরি। সেই বিবেচনায় চামড়া শিল্পের জন্য কিছু রাসায়নিক উপাদানে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
এ ছাড়া পরিবহনের টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইটের কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক কমার প্রস্তাব থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
Leave a Reply