1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ৪৬ শিক্ষকের বিবৃতি

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১১ মে, ২০২৫

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের চলমান আন্দোলনের মধ্যে এবার শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ৪৬ জন শিক্ষক। শিক্ষকরা বিবৃতিতে স্বৈরচারী মনোভাব, দুর্নীতিগ্রস্ত, অপেশাদার এবং অদক্ষ উপাচার্যের হাত থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।

শনিবার (১০ মে) দুপুরে উদ্বিগ্ন শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিটিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান দুরবস্থায় উদ্বিগ্ন শিক্ষক সমাজের এই বিবৃতিতে ৪৬ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর দেখা যায়।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৮ই) মে বিবৃতিটি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ডফ্লোরে শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনানা।

বিবৃতিটিতে, তারা গত বছরের অক্টোবর থেকে এই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংকট ও স্থবিরতা গুলো উল্লেখ করা হয়। সেখানে শিক্ষক সংকট সমাধানে পদক্ষেপ না নেওয়া, নিয়মবহির্ভূত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া, অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্ত এইসকল কর্মকর্তাদের ট্রেজারের সম্মতিহীন একক সিগনেচারে বেতন ভাতা দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেশিরভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করার ফলে একাডেমিক স্থবিরতা তৈরি হওয়া, সময়মতো শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে সাড়া না দেয়া, গোপন সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করা, বছরের শেষ সময়ে এসেও বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারা, বিতর্কিত কলিমুল্লাহকে একাডেমিক কাউন্সিলে অন্তর্ভুক্ত করা, জুলাই বিপ্লবের পক্ষে অবস্থান করা শিক্ষকে সিন্ডিকেট থেকে অবৈধ ভাবে বাদ দেয়া এবং শেখ হাসিনার গদি টিকিয়ে রাখতে চাওয়া ফ্যাসিবাদের দোসর সেইসব শিক্ষকদের লাভজনক বিভিন্ন কমিটিতে পদায়ন, শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকে রাখা, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে মামলা ও জিডি করা, ফ্যাসিবাদের দোসর দিয়ে ফ্যাসিস্টের সহযোগী চিহ্নিতকরণের এক সদস্য বিশিষ্ট প্রহসনমূলক কমিটি গঠন সহ নানা অভিযোগ উল্লেখপূর্বক শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এই অধোগতি ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত আহ্বান জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, ২০২৪ সালের গৌরবজনক জুলাই বিপ্লবের পরে বড় আশায় বুক বেঁধেছিলাম একটি নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ কার্যক্রমের সাথে তাল রেখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ও একটি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শনৈ শনৈ উন্নতির পথে অগ্রসর হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে গত অক্টোবর ২০২৪ থেকে এযাবৎ আমরা লক্ষ্য করছি-

১। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগে মাত্র দুজন/তিনজন শিক্ষক কর্মরত এবং সেগুলোসহ অনেক বিভাগে অনেক শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন থাকা সত্ত্বেও এই আট মাসে সেই সকল বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিভাগসমূহের পাঠদান ও একাডেমিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে। অথচ ভিসি মহোদয় এদিকে কোনো ভ্রক্ষেপ না করে ঢাকায় নির্বিকার দিন যাপন করছেন। আরো মর্মান্তিক হলো তিনি শিক্ষক নিয়োগের এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বরং একের পর এক বেআইনি ও অবৈধভাবে নিম্ন গ্রেডের বিভিন্ন কর্মচারী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন। এসকল নিয়োগ অবৈধ হওয়ায় তাদের বেতন-ভাতাদির প্রস্তাব সংক্রান্ত নথি ট্রেজারার মহোদয় অনুমোদন না করায় তাঁর অনুমোদন ছাড়াই ভিসি একক স্বাক্ষরে অনুমোদন করছেন এবং তাদেরকে অবৈধভাবে বেতনভাতাদি দিচ্ছেন।

২। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শুচিতা শরমিনের নিয়োগপত্রে তাঁকে সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে হবে মর্মে বলা হলেও তিনি সপ্তাহে দুয়েকদিন কয়েক ঘণ্টা মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন আর বাকি সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। তাঁর এই অনুপস্থিতিতে আইনানুযায়ী উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব পালনের সুযোগও তিনি দেন না। বিভাগ থেকে প্রেরিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা- ভর্তি ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন একাডেমিক প্রস্তাব তাঁর দপ্তরে তিন-চার মাস পড়ে থাকে এবং তিনি দেখারও সময় পান না। ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এক ক্যান্সার আক্রান্ত শিক্ষার্থীর একটি সাহায্যের আবেদন ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাসে তার মৃত্যুর তারিখ পর্যন্ত ডিসির দপ্তরে পড়ে ছিল, অথচ তিনি খুলেও দেখেননি। এভাবে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে মারাত্মক জট ও বিপর্যয় দিন দিন বেড়েই চলছে।

৩। ভিসির যোগদানের পর থেকে আট মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটির বা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কমিটির কোনো একটি সভা এ যাবৎ অনুষ্ঠিত হয়নি। ভিসি দুটি সিন্ডিকেট সভা আয়োজন করেছেন যার একটি ছিল এজেন্ডা-গোপন-রাখা দূরভিসন্ধিমূলক সভা যা শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে নিয়মহীনভাবে জরুরি একটিমাত্র আলোচ্যবিষয়ের বিশেষ সভায় রূপান্তর করা হয় এবং অপরটিও ছিল একটি বিশেষ সভা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অজস্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের অভাবে মাসের পর মাস আটকে আছে যার প্রতি ভিসির কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। আর সিন্ডিকেটে তাঁর স্বৈরাচারী ইচ্ছ্য মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে তিনি আইন অনুযায়ী সিন্ডিকেটে যে কয়জন শিক্ষক প্রতিনিধি থাকার কথা তাঁদের সকলকে নিয়মহীনভাবে অপসারণ করেছেন। একই সাথে বিগত অনির্বাচিত স্বৈরাচারী সরকারকে বৈধতা দানের লক্ষ্যে গঠিত জানিপপের সুবিধাভোগী আর সেই জানিপণের কাণ্ডারী জনাব নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর খয়ের খা চারজনকে বিশেষ ব্যবস্থায় সিন্ডিকেটের সদস্য করেছেন যাতে ভিসির সকল স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত অবলীলায় পাশ করা যায়।

৪। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভৌত কাজ ও ক্রয়ের জন্য ৬ কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ ছিল। ভিসির সীমাহীন অদক্ষতা ও অযোগ্যতার কারণে আজ বছরের প্রায় ১১ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও তা থেকে মাত্র ১ কোটি টাকাও বায় করা সম্ভব হয়নি। বই কেনার ৫০ লক্ষ টাকা থেকে একটি বইও এখন পর্যন্ত ক্রয় করা হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে যথেষ্ট বাজেট। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ভিসির অযোগ্যতার কারণে কোনো উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না।

৫। এ অবস্থায় ছাত্রদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনেক সংকট ও সমস্যা তৈরি হওয়ায় তারা এসব সমাধানে ভিসির নিকট দাবিনামা উপস্থাপন করলে ভিসি তাদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দাবি পূরণের ব্যবস্থা না নিয়ে একের পর এক মামলা, জিডি ইত্যাদি দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের মতো দমন পীড়নের পথ বেছে নিচ্ছেন। ডিসির এই ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দিনদিম সম্পূর্ণ অচলাবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

৬। জুলাইয়ের গৌরবজনক অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে নিযুক্ত ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে খুঁজে খুঁজে স্বৈরাচারী সরকারকে রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্তকারী শিক্ষক ও কর্মকর্তাদেরকে বিভিন্ন লাভজনক কমিটি ও প্রশাসনিক পদে নিয়োগ দিচ্ছেন। অপর দিকে গত ফ্যাসিবাদী সরকারের দীর্ঘ ক্ষমতাকালে আওয়ামী শিক্ষকদের পেশাজীবী সংগঠন ‘নীল’ দলে শত চালের মধ্যেও কখনো যোগদান করেননি এবং বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের ছাত্রদের ওপর সরকারি নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়ে পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান করেছেন এমন শিক্ষতকে ‘পতিত সরকারের দোসর’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে অপসারণ করেছেন।

৭। আরো মর্মান্তিক বিষয় হলো ছাত্রদের দাবির সাথে মস্করা করে বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর চিহ্নিত করার নামে এই ভিসি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি প্রহসনমূলক কমিটি করেছেন। প্রহসনমূলক এ কারণে যে, এক সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান হলেন সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক যিনি নিজে বিগত সরকারের অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দানের সংগঠন জানিপপের সিলেটের সংশ্লিষ্ট শাখার সহ-সমন্বয়ক ছিলেন।

৮। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষক অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ইত্যাদি পদে পদোন্নতির যোগ্য হয়ে প্রায় বছর পার করে ফেলছেন। অথচ, তাঁদের ন্যাযা পদোন্নতির কার্যক্রম বিষয়ে ডিসি কোনোরকম উদ্যোগ গ্রহণ না করে পুরো বিষয়টি অনির্দিষ্টভাবে ভুলিয়ে রাখছেন যা শিক্ষকগণের মাঝে বঞ্চনাজনিত পেশাগত অসন্তোষ দিন দিন বৃদ্ধি করছে। সুষ্ঠু একাডেমিক কার্যাদি সম্পাদনের ক্ষেত্রে এ অসন্তোষ একটি মারাত্মক বাঁধা।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির এই জাতীয় সকল স্বৈরাচারী ও অপেশাদার আচরণ, দুর্নীতিগ্রন্থতা এবং মারাত্মক অদক্ষতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনদিন চরম অধোগতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবিনামার সাথে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এই অধোগতি ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য শিক্ষাপ্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com