শীতকালে দাঁতের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- দাঁতের সংবেদনশীলতা। এতে শিরশির অনুভূতি হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমেই সংবেদনশীলতার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এটির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেমন- শক্ত ব্রাশ দিয়ে ভুল পদ্ধতিতে দাঁত মাজা। এতে দাঁত থেকে মাড়ি নেমে গিয়ে শেকড়ের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে (জিঞ্জিভাল রিসেশন) দাঁত সংবেদনশীল হতে পারে। মাড়িরোগের কারণে এর ভেতরে পকেট তৈরি হয়। এতেও দাঁতের সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে।
মাড়ি অসুস্থ হলে দাঁতের শেকড়ের চারপাশের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। দাঁতের কোনো পুরনো ফিলিংয়ের কিছু অংশ ভেঙে গিয়ে দাঁতক্ষয় বা ক্যারিজ উন্মুক্ত হলে কিংবা ফিলিং ও দাঁতের সংযোগস্থলে ফাটল দেখা দিলে, দাঁতে বৃহদাকৃতির কোনো ধাতব ফিলিং (যেমন- অ্যামালগাম ফিলিং) থাকলে, দাঁতে সূক্ষ্ম ফাটল (ক্র্যাকট টুথ সিন্ড্রোম) তৈরি হলে, দাঁতে ক্যারিজ হলে, দাঁতের ব্রিজ (বাঁধাই করা স্থায়ী দাঁত) এবং ক্রাউন পুরনো হয়ে দাঁতের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে গেলেও দাঁতে সংবেদনশীলতা তৈরি হতে পারে।
ঘুমের ঘোরে দাঁত ঘষা (ব্রাক্সিজম), উত্তেজনাবশত দাঁতে দাঁত চেপে ধরার অভ্যাসে দাঁতের উপরিতল ক্ষয় বা ইরোজন দেখা দিতে পারে। ফলে দাঁত হয়ে পড়তে পারে সংবেদনশীল। অবশ্য কারও দাঁতে যদি আগে থেকেই সংবেদনশীলতা থাকে, শীতকালে এর প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য ডেন্টাল সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে। ঘুমের ঘোরে দাঁত ঘষার সমস্যা থাকলে ‘নাইট গার্ড’ ব্যবহার করে দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধ করা যায়। শীতল আবহাওয়ায় দাঁতের সংবেদনশীলতা থেকে বাঁচতে সরল সমাধান হচ্ছে, মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার পরিবর্তে নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া। শীতের আবহাওয়ায় বাইরে গেলে সঙ্গে উষ্ণ পানীয় রাখা রাখুন। শীতের প্রকোপ থেকে দাঁত রক্ষা করবে।
দাঁতের এ সংবেদনশীলতায় ফ্লোরাইডসমৃদ্ধ টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ নিয়মিত ব্যবহারে উপকার হতে পারে। ব্যবহার করতে হবে নরম তন্তুবিশিষ্ট টুথব্রাশ। কারণ শক্ত ব্রাশ দাঁতের অ্যানামেল ক্ষয় করে দাঁত সংবেদনশীল করে তোলে। জোরে জোরে ব্রাশ না করে আলতোভাবে দাঁত মাজুন। দুই দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা অংশ পরিষ্কারের জন্য সুতা বা ফ্লোস ব্যবহার করুন, যা দাঁতের মাড়ি উদ্দীপ্ত করে মাড়িতে রক্ত চলাচলে সাহায্য করতে পারে।
শীতকালে দাঁত ছাড়াও মুখগহ্বরেও সমস্যা হতে পারে। ত্বকের মতো মুখগহ্বরও সহজে শুষ্ক হতে পারে। মুখগহ্বর শুষ্ক হলে পর্যাপ্ত লালা নিঃসরিত হয় না। লালার কাজ হলো, দাঁতে জমে থাকা খাদ্য কণিকাগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা। মুখগহ্বর শুষ্ক হলে দাঁতে সহজেই জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে। দেখা দেয় দন্তক্ষয় বা ডেন্টাল ক্যারিজ। আমরা যে খাবার খাই, তার হজম প্রক্রিয়া শুরু হয় মুখগহ্বর থেকেই। মুখগহ্বরে খাবার হজমের এ কাজটি শুরু করে মুখে নিঃসৃত লালা। তাই মুখগহ্বর শুষ্ক হয়ে গেলে তা হজমেও ব্যাঘাত ঘটায়। শীতকালে মুখগহ্বরের শুষ্কতা দূর করতে বেশি বেশি পানি পান করুন। ফাস্টফুড বা স্ন্যাকস কম খান। শীতের আবহাওয়ায় মুখমণ্ডল ও মাথা গরম রাখতে যথেষ্ট উষ্ণ কাপড় পরিধান করা আবশ্যক।
Leave a Reply