বানের পানিতে নিমজ্জিত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা। তলিয়ে গেছে উপজেলা পরিষদসহ গ্রামীণ জনপদ। দিনদিন এ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ ও থানা চত্বরসহ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে পানি। ভেসে গেছে কৃষিজমির ফসলাদি ও মৎস্য খামার। পানিবন্দি হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার। দেখা দিয়েছে তীব্র খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। জীবন বাঁচানোর তাগিদে নিরাপদ স্থানের দিকে ছুটছে বানভাসি মানুষ।
এদিকে প্রধান ও অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে অন্যান্য এলাকার সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রবল স্রোতে ধসে গেছে রাস্তা-ঘাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পদ্মাপাড়ের এই উপজেলাবাসী।
বানভাসি মানুষ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে হরিরামপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা চত্বর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। নিমজ্জিত হয়েছে উপজেলার অধিকাংশ ঘরবাড়ি দোকানপাট। ভেসে গেছে মৎস্য খামার ও তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির ফসলাদি।
বিশেষ করে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বকচর, ভাওয়ারডাঙ্গী, বাহির চর, হারুকান্দির ভেলাবাদ, হারুকান্দি, চানপুর, গোপীনাথপুরের চরপাড়া, উজানপাড়া, ভাটিপাড়া, বাহাদুরপুর, ছোট বাহাদুরপুর, কাঞ্চনপুরের বালিয়াকান্দি, শুভকান্দি, বৈদ্যকান্দি ও কাঞ্চনপুর; লেছড়াগঞ্জের পাটগ্রাম, সিলিমপুর, হরিহরদিয়া, কাজিকান্দা, গঙ্গাপ্রসাদ, রুস্তমপুর ও লেছড়াগঞ্জ; বয়ড়ারি দড়িকান্দি, খালপাড় বয়ড়া, দাসকান্দি বয়ড়া; ধূলশুড়ার কমলাপুর, নীলগ্রাম, আবিধারা, গঙ্গারামপুর, শ্যামপুর, রামেশ্বরপুর ও আলিয়ানগর গ্রামসহ আজিমনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। নৌকাই এসব এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা। শিশু বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বানভাসি মানুষ। খাবার ও ত্রাণসামগ্রীর অভাবে অনেক মানুষ অনাহারে জীবনযাপন করছেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, হরিরামপুর উপজেলাটি জেলার সবচেয়ে নিচু ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় অবস্থিত। অস্বাভাবিক ভাবে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে উপজেলা পরিষদ, থানাসহ অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট ও ঘরবাড়ি। এতে করে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার বানভাসি মানুষের জীবনযাত্রা। এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ এখনো শুরু হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) ফারুক আহমেদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ১০ জুলাই থেকে হরিরামপুরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। রবিবার (১৯ জুলাই) পদ্মা নদীর পানি ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে পদ্মা নদীর হরিরামপুর অংশে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। মজুদ করা হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ। বন্যাকবলিত মানুষের থাকার জন্য দুটি আশ্রয়কেন্দ্রসহ ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি ইউনিয়নের ৪০০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, হরিরামপুরসহ জেলার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্তপরিমাণ শুকনো খাবার ও ত্রাণসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে।
Leave a Reply