মহান বিজয় দিবসের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। ১৪৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের তোপের মুখে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত ১ বল বাকি থাকতেই ১৪০ রানে অলআউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তাতেই ৭ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
শেষ ওভারে স্বাগতিকদের দরকার ছিল ১০ রান। হাসান মাহমুদের শেষ ওভারে রভম্যান পাওয়েল উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে জয়টা নিশ্চিত হয়ে যায় টাইগারদের। এরপর এক বল বিরতি দিয়ে বোল্ড আলজারি জোসেফ। তাতেই নিশ্চিত দারুণ এক জয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টে সময়টা ১৫ ডিসেম্বরের শেষ প্রহর। হাজার কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশে ঘড়ির কাটায় ১৬ ডিসেম্বর। আজকের দিনে বাংলাদেশ পালন করছে বিজয়ের ৫৩ বছর। ১৬ ডিসেম্বরের সকালে দেশের মানুষের উৎসবের উপলক্ষ্যটা আরেকটু চওড়া হলো বাংলাদেশের জয়ের সুবাদে।
১৪৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচের শুরুতে খুব একটা সুবিধা করতে দেয়নি বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই হাসান মাহমুদ দিয়েছেন মাত্র ১ রান। পরের ওভারেই তাসকিন আহমেদ নিয়েছেন প্রথম উইকেট। ব্রেন্ডন কিংয়ের ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় মিড অফ অঞ্চলে। ক্যাচ নেন তানজিদ হাসান তামিম।
নতুন ব্যাটার নিকোলাস পুরান শুরুতেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে বড় শট খেলতে চেয়েছিলেন। শেখ মেহেদি হাসানের বলটায় ব্যাট ছোঁয়ানো হয়নি। ফলাফল স্ট্যাম্পিং। এরপরেই তানজিম হাসানকে ২টি ছক্কা আর ১টি চার মেরেছেন জনসন চার্লস। চার মেরেছেন মেহেদী হাসানকেও। তবে পরের বলেই আরেকটি বাউন্ডারি মারতে গিয়ে মিড অফে হাসান মাহমুদের ক্যাচে পরিণত হয়েছে চার্লস।
শেখ মেহেদির স্কিড করা বল আন্দ্রে ফ্লেচারের ব্যাটের কিনারা ছুঁয়ে চলে যায় লিটনের হাতে। এক বল বিরতি দিয়েই সেই মেহেদি-লিটন কম্বিনেশনে আউট হয়েছেন রস্টন চেজ।
বাংলাদেশকে মূলত চালকের আসনে বসিয়ে দেন মেহেদি। ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ ইউকেট।
তবে সেই চার ওভার শেষ হতেই মূলত টাইগার বোলারদের ওপর চেপে বসেন রভম্যান পাওয়েল। গুদাকেশ মোতিকে নিয়ে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ করেছেন তানজিম সাকিব। খানিক পরেই আকিল হোসেনকে ফেরান রিশাদ। ৬১ রানেই নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৭ উইকেট।
অষ্টম উইকেট জুটিতে শেফার্ড ও পাওয়েল মিলে করেন ৬৭ রান। ১৭ বলে ২২ রান করা শেফার্ডকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। পুল শট খেলতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে রিশাদের হাতে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। তবে এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন রোভমান পাওয়েল। ইনিংসের ৩ বল বাকি থাকতে তাকে ফেরান হাসান মাহমুদ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাওয়েল। ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ৬০ রান।
এদিন টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করেছে ৬ উইকেটে ১৪৭ রান। সৌম্য সরকারের ৪৩ রানের ওপর ভর করেই বাংলাদেশ এই স্কোর করে।
আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা খুব একটা খারাপ ছিল না। তবে স্কোরবোর্ডে ১৫ রান জমা হতেই তানজিদ হাসান তামিম লিটনকে হারায় তারা। ১১ বলে ৬ রান করে অকিল হোসেনের বলে বোল্ড আউট হয়ে ফেরেন এই বাঁহাতি। অধিনায়ক লিটন আউট হন গোল্ডেন ডাক মেরে।
আফিফ হোসেন ধ্রুব তার ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১১ বলে ৮ রান করে রস্টন চেজের বলে অকিল হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর সৌম্য সরকার ও জাকের আলি অনিকের জুটি থেকে আসে ৪২ বলে ৫৭ রান। দলীয় ৮৭ রানে জাকের ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। এরপর সৌম্য সরকারও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। ৩২ বলে ৪৩ রান করা এই বাঁহাতিকে ফেরান ম্যাকময়।
১৫ ওভার শেষে রান ছিল ৯৫। বাংলাদেশের স্কোর সেখান থেকে ১৪০ পেরুবে এমন বাজি ধরার লোক খুব কমই ছিল। সেখান থেকে ১ বছর পর জাতীয় দলে শামীম পাটোয়ারী খেললেন ১৩ বলে ২৭ রানের ইনিংস।
শামীমকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মেহেদি হাসান। দুজনে মিলে বাংলাদেশের স্কোর ১৪০ পার করতে সাহায্য করেছেন। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে আউট হন শামীম। শেষ বল থেকে রিশাদ হোসেন নেন দুই রান। আর তাতেই নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৭ রানের পুঁজি পায় টাইগাররা।
Leave a Reply