আবাসিক হোটেলে গোপন বৈঠকের অভিযোগে ১৮ ইউপি সদস্য আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় কক্সবাজারের কলাতলীর একটি রিসোর্ট থেকে তাদের আটক করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সভার খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ শহরের কলাতলী এলাকার আবাসিক হোটেল ইউনি রিসোর্টে অভিযান চালিয়েছিল। পুলিশের অভিযানকালে অনেকে পালিয়ে গেলেও ৪০ জনকে আটক করা হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাইয়ের পর যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইজুল আযীম নোমান গ্রেফতারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ইউনিয়ন সদস্য সংস্থা (বাইসস) কক্সবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল বাইসস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুনের। এছাড়া, আতাউল্লাহ খান নামে এক রাজনৈতিক ব্যক্তির উপস্থিতির কথা লিফলেটে লেখা ছিল।
কলাতলীর ইউনি রিসোর্টে পার্বত্য এলাকা এবং কক্সবাজারের দু’শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরা সভা করছেন খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ ও গোয়েন্দারা ঘিরে রাখেন। তিন ঘণ্টা যাচাই-বাছাই করে সন্দেহজনক ১৮ জনকে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আটকদের মধ্যে তাৎক্ষণিক দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন, সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের মোহাম্মদ মিয়া ও টেকনাফ উপজেলার জহির আহমেদ। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
আটকরা বলেন, জেলার ৯টি উপজেলার ইউপি সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের আলোচনা সভা চলছিল। এ সময় পুলিশ ও অর্ধ-শতাধিক সমন্বয়ক তাদের হল রুম ঘেরাও করেন। এরপর পুলিশ ও সমন্বয়ক পরিচয়ধারীরা এসে তল্লাশি যাচাই-বাছাই শুরু করেন।
পুলিশ বলছে, আওয়ামীপন্থী ইউপি সদস্যরা গোপনে বৈঠক করছেন- এ তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
এদিকে, হোটেল ঘেরাও করায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয় আশপাশের এলাকায়। অবস্থান করা পর্যটকদের হোটেল থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আজিম নোমান বলেন, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ইউপি সদস্যরা গোপন বৈঠক করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এখানে অনেক ইউপি সদস্য আছেন। যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে তাদের আটক করা হবে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই- তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
আটক হওয়া টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জহির আহমেদ বলেন, আজ জেলার ইউপি সদস্যের নিয়ে গঠিত সংগঠন মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনর আলোচনা সভা ছিল। আমরা প্রায় ৭০ জনের মতো ইউপি সদস্য উপস্থিত ছিলাম। সেখানে দেশের ক্লান্তিকালে কীভাবে কাজ করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। হঠাৎ অতর্কিতভাবে পুলিশ ও সমন্বয়করা ঢুকে আমাদের আটক করেন। আমাদের যদি গোপন বৈঠক থাকতো, তাহলে সড়কের পাশে হোটেলে এতবড় অনুষ্ঠান হতো না। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।
পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া মহেশখালী এলাকার ইউপি সদস্য সেলিম জানান, আজ আমাদের মেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের আলোচনা সভা ছিল। সেখানে সব রাজনৈতিক দলের মানুষও ছিল।
সুত্র মতে, পুলিশের কাছে খবর পৌঁছে ওই আলোচনা সভার নামে আওয়ামী লীগের দোসর ইউপি সদস্যরা হোটেল ইউনি রিসোর্টে জড়ো হয়ে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করছেন। এমন খবর পেয়েই পুলিশ অভিযান চালিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, ওই সভায় আওয়ামী লীগের দোসর অনেক ইউপি সদস্য অংশ নিয়েছিলেন। তবে সেই সভায় সরকারবিরোধী কোনো কথা হয়নি। বরং তৃণমূলের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি হিসেবে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারে সহযোগী করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
পুলিশ সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুলিশি অভিযানের সময় অধিকাংশ ইউপি সদস্য সটকে পড়েন। তবে ৪০ জনের মতো ইউপি সদস্যকে হোটেলে আটকে দেয়া হয়। পরে যাচাই-বাছাই করে মামলার আসামি থাকা ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
Leave a Reply