রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গণমিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-জনতা। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সেখানে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার ডেমোক্রেসি কোথায়? আমি আমার চোখের সামনে দেখেছি একটা মানুষের মুখ দিয়ে গড়গড় করে রক্ত বেরোচ্ছে। তাকে আমরা ঠিকমতো হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি নাই।’
নিজের হাত দেখিয়ে ওই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি আমার হাত দিয়ে বুলেট বের করেছিলাম, বুলেট!! এটা আমার স্বাধীন দেশ? আমার স্বাধীনতা কোথায়?’
কর্মসূচিতে দাঁড়ানো আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘প্লিজ গুলি করা বন্ধ করুন, প্লিজ।’
এদিকে সাইন্সল্যাবেও গণমিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিবাদ জানাতে তারা রাস্তায় নেমেছেন। সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ওপরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ও হত্যার প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা- ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো’, ‘সৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘দিয়েছিতো রক্ত, আরো দেবো রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অংশ হিসেবে নিহত ছাত্রদের বিচারের দাবিতে স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে আসছে নানা পেশা ও মতের মানুষ। এখানে বিভিন্ন মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ সমবেত হয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যোগ দিচ্ছেন। ‘রক্তের দাগ দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ এই ব্যানারে শিক্ষার্থী-জনতার দ্রোহযাত্রা কর্মসূচি চলছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে আবাহনী মাঠের পাশে আজ শুক্রবার বেশকিছু শিল্পী জড়ো হয়েছিলেন প্রতিবাদ জানাতে। তাদের মূল বক্তব্য ছিল বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এবং তাতে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর বিচার করতে হবে।
তারা বলেন, কারফিউ জারির পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে গ্রেফতার করছে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
এদিন সকাল ১০টায় বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর ফুটপাতে জড়ো হয়েছিলেন কিছু অভিভাবক, যাদের সন্তানরা বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালেয়ে পড়াশুনা করেন। বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে শিক্ষার্থী হত্যার বিচার ও সন্তানদের নিরাপত্তা দাবি করেন তারা।
সায়মা আহমেদ জয়া নামের একজন অভিভাবক বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের ঘটনার বিচার চান।
‘আমাদের অনেক ছেলেকে গুলি করে মারা হয়েছে। এখন তাদেরকে ঘরে থাকতে দিচ্ছে না, আমরা ইয়াং ছেলেদের পড়াশোনা করতে পাঠাতে পারছি না, খেলতে পাঠাতে পারছি না। এভাবে তো চলতে পারে না,’ বলেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply