রাজধানীর হাজারীবাগে ব্যবসায়ী তানিয়া আক্তার (৩৫) হত্যা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল কুদ্দুসুর রহমানকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ৩১ মে দশ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে কুদ্দুসুর রহমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার সিএমএম আদালত।
ওই রিমান্ড শেষে আজ আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান।
মামলা থেকে জানা যায়, তানিয়া আক্তার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করতেন। ২০১৭ সালে আজিজুর রহিমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের কোনো সন্তান নেই। হাজারীবাগ থানা এলাকার মিতালী রোডে শাহিনের বাসায় গত ৫ জানুয়ারি থেকে ভাড়া থাকা শুরু করেন তানিয়া।
গত ১৯ জানুয়ারি তানিয়া তার ভাইয়ের বাসায় যান। আবার রাতে নিজবাসায় ফিরে আসেন। পরদিন তানিয়াকে তার মা ও ভাই ফোন দিয়ে ফোন বন্ধ পান। তানিয়ার মা বাড়িওয়ালা শাহিনকে ফোন দিলে রুমের ভেতর থেকে দরজা লাগানো জানালে তার মা-বাবা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে দরজা খুলে বাথরুম থেতে তানিয়ার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে।
এই ঘটনায় তানিয়ার ভাই তন্ময় হাসান গত ২২ জানুয়ারি হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা দায়েয়ের পর সন্দেহভাজন হিসেবে ফ্ল্যাটের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তদন্তে উঠে আসে, এ ঘটনায় মো. কুদ্দুসুর রহমান জড়িত। তাই কুদ্দুসুর রহমানকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর গত ৩০ মে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
নিহত তানিয়ার ভাই মামলার বাদী মো. তন্ময় হাসানের দাবি, ‘হয়তো আমার বোনের কাছে ওই কর্মকর্তার এমন কোনো তথ্য ছিল, যা প্রকাশ্যে এলে তিনি বিপাকে পড়বেন। এ কারণেই তিনি তাকে হত্যা করে ফোনটি নিয়ে যান।’
তানিয়ার ভাড়া বাসার আশপাশের বিভিন্ন ক্লোজড সার্কিট টিভি (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। এসব ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে তানিয়া তার বাসার গলিতে ঢোকেন। দুই হাতে কাপড়ের দুটি থলে এবং কাঁধে ঝোলানো ছিল ভ্যানিটি ব্যাগ। পেছনে কিছুটা দূরত্ব রেখে হাঁটছিলেন কুদ্দুসুর রহমান। তার পরনে ছিল জ্যাকেট, কাঁধে ব্যাগ (ব্যাকপ্যাক) ও মুখে মাস্ক। এর কিছুক্ষণ পরের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ওই বাসা থেকে হুডি পরে বের হচ্ছেন কুদ্দুসুর রহমান, তার পিঠে ছিল ব্যাগ। তিনি দ্রুত স্থান ত্যাগ করছেন।
অন্য ফুটেজগুলোতে দেখা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে কুদ্দুসুর ও তানিয়া ধানমন্ডির বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। তখন কুদ্দুসুর মাস্ক পরে ছিলেন না। ধানমন্ডি থেকে দুজন রিকশা নিয়ে হাজারীবাগে ঢোকেন। বাসার কাছাকাছি দূরত্বে এসে তারা রিকশা থেকে নেমে যান। এরপর তানিয়ার পেছন পেছন দূরত্ব বজায় রেখে কুদ্দুসুর হাঁটতে থাকেন।
তানিয়ার স্বামী কুমিল্লায় থাকেন। দুজনের বোঝাপড়ায় ঘাটতি থাকায় তানিয়া বেশির ভাগ সময় ঢাকায় নিজ পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। এর মধ্যে তানিয়ার সঙ্গে কুদ্দুসুর রহমানের সখ্য হয়। তারা মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। একপর্যায়ে তানিয়া চেয়েছিলেন তাদের বিয়ে হোক। তাদের এই সম্পর্কের বিষয়টি তানিয়া তার দু–একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকেও জানিয়েছিলেন।
Leave a Reply