ভারতের সদ্য সমাপ্ত পার্লামেন্ট তথা লোকসভার ভোট গ্রহণের পর সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার এক্সিট পোল নিয়ে আলোচনায় যখন চায়ের কাপে তুফান উঠছে, ঠিক তখনই চাঞ্চল্যকর সমীক্ষা করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই। ভারতে এই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই দিয়ে সমীক্ষা বুথফেরত করাল সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম জি নিউজ। সংস্থার দাবি, ভারতজুড়ে প্রায় ১০ কোটি ভোটারের বক্তব্য খতিয়ে দেখে এই সমীক্ষা করেছে এআই।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে করা জি নিউজের এই সমীক্ষা ভারতের বেশিভাগ সংস্থার করা বুথফেরত সমীক্ষার থেকে অনেকটাই আলাদা। এআই যা ফলাফলের আভাস দিচ্ছে, সেটা বাস্তব বলে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যেতে পারে বিজেপি। কারণ বেশিভাগ এক্সিট পোল যেখানে এনডিএর ৩৫০-৪০০ আসন পাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে, সেখানে এআই সমীক্ষার পূর্বাভাস বলছে, ক্ষমতায় ফিরলেও খুব স্বস্তিতে থাকবে না গেরুয়া শিবির। বরং ২০১৯-এর থেকে অনেকটাই কমবে এনডিএর আসন সংখ্যা।
এআইয়ের ফলাফল
এনডিএ : ৩০৫-৩১৫
ইন্ডিয়া : ১৮০-১৯৫
অন্যান্য (তৃণমূল-সহ) : ৩৮-৫২
এআই-এর সমীক্ষা বলছে, ভারতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেতে পারে ৩০৫-৩১৫ আসন। বিজেপি কত আসন পাবে সেটা আলাদা করে না বলা হলেও সমীক্ষায় যা ইঙ্গিত তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বেগ পেতে হবে গেরুয়া শিবিরকে। উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে ৫০-৫৫ আসন দেয়া হয়েছে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী, রাজস্থান, কর্নাটক বিহারেও ধাক্কা খাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বিহারে ১৫-২০ আসন পেতে পারে বিজেপি। বিরোধী শিবিরের জন্যও একই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মহারাষ্ট্র এনডিএ-কে দেওয়া হচ্ছে ২৬-৩৪, বিরোধী শিবির পাচ্ছে ১৫-১৮ আসন। সব মিলিয়ে ইন্ডিয়া জোট ১৮০-১৯৫ আসন পেতে পারে। তৃণমূল এর বাইরে। তৃণমূলের আসন যোগ করলে ইন্ডিয়া জোট অনায়াসে পৌঁছে যাবে ২০০-এর ওপারে।
যদিও পশ্চিমবঙ্গের সমীক্ষায় বিশেষ চমকপ্রদ পূর্বাভাস দেয়নি এআই। অন্যান্য সমীক্ষক সংস্থার বেশিভাগের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপিকে এগিয়ে রেখেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এআই-এর মতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পেতে পারে ২০-২৪ আসন। তৃণমূল পেতে পারে ১৬-২২ আসন। আর বাম-কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে যেতে পারে শূন্য থেকে এক আসন।
রাজ্যভিত্তিক সম্ভাব্য ফলাফল :
পশ্চিমবঙ্গ : এনডিএ পেতে পারে ২০ থেকে ২৪ আসন। তৃণমূল জিতবে ১৬ থেকে ২২ আসনে। ইন্ডিয়া জোটের দখলে থাকতে পারে ১ আসন।
অন্ধপ্রদেশ : দক্ষিণে এই রাজ্যে ১২ থেকে ১৬ আসন পেতে পারে এনডিএ, আর ইন্ডিয়া ২ থেকে ৪ আসন। বাকি ৬ থেকে ১০ আসনে জিতবে ওয়াইএসআরসিপি।
বিহার : তীব্র লড়াই। এনডিএ আর ইন্ডিয়া উভয়েই জিততে পারে ১৫ থেকে ২৫ আসনে।
তেলেঙ্গানা : আসনসংখ্যার নিরিখে এগিয়ে ইন্ডিয়া। কত? ৩১ থেকে ২৭ আসন। ১০ থেকে ১২ আসন পেতে পারে এনডিএ। ৩ থেকে ৫ আসনে জেতার সম্ভাবনা অন্যদের।
মহারাষ্ট্র : মারাঠাভূমিতে সর্ববৃহৎ হতে পারে এনডিএ। ২৬ থেকে ৩৪ আসন পেতে পারে তারা। ইন্ডিয়া ও অন্যন্যরা মিলে জিততে পারে ১৫ থেকে ২১ আসনে।
রাজস্থান : দেশের প্রথম এআই বুথফেরত সমীক্ষা বলছে, রাজস্থানে এনডিএ জিতবে ১৫ থেকে ১৯ আসনে। ইন্ডিয়া পেতে পারে ৬ থেকে ১০ আসন।
ওড়িশা : এনডিএ পেতে পারে ১০ থেকে ১৪ আসন। ইন্ডিয়ার ঝুলিতে ৪ থেকে ৬ আসন।
তামিলনাড়ু : এনডিএ পেতে পারে ১০ থেকে ১২ আসন। ইন্ডিয়া জিততে পারে ২১ থেকে ২৭ আসনে, আর অন্যরা ৩ থেকে ৬ আসনে।
কর্নাটক- এনডিএ পেতে পারে ১০ থেকে ১৪ আসন। ইন্ডিয়া জিততে পারে ১২ থেকে ২০ আসন।
কেরালা : এনডিএ পেতে পারে ৫ থেকে ৭ আসন, আর ইন্ডিয়া ১০ থেকে ১২ আসন। অন্যদের ঝুলিতে ২ থেকে ৫ আসন।
দিল্লি : আপশাসিত রাজ্যে এগিয়ে ইন্ডিয়াই। ৩ থেকে ৫ আসনে জিততে পারে তারা। এনডিএ দখলে যেতে পারে ২ থেকে ৪ আসন
গুজরাট : মোদির রাজ্যে ২০ থেকে ২৬ আসন পাবে এনডিএ। ইন্ডিয়ার জিতে পারবে ২ থেকে ৪ আসনে।
পঞ্জাাব : এনডিএ ৫ থেকে ৬, আর কংগ্রেস পেতে পারে ৩ থেকে ৫ আসন। ২ থেকে ৪ আসনে জিততে পারে আপও।
কী এই এক্সিট পোল? বুথফেরত সমীক্ষাই হচ্ছে এগজিট পোল। ভোটপর্ব মেটার পরেই বিভিন্ন এজেন্সি, সংবাদমাধ্যম এগজিট পোল বা বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে থাকে। এই বুথ ফেরত সমীক্ষা বা এগজিট পোল আসলে এক ধরনের ওপিনিয়ন পোল। ভোটারদের থেকে তাদের পছন্দের প্রার্থী এবং দল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় বুথ ফেরত সমীক্ষায়। ভোট দিয়ে বুথ থেকে বের হওয়ার ঠিক পর মুহূর্তেই ভোটারদের থেকে এই মতামত জানতে চাওয়া হয়। আর সেই মতামতের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় এগজিট পোল বা বুথ ফেরত সমীক্ষার রিপোর্ট।
সূত্র : জি নিউজ, সংবাদ প্রতিদিন, অন্যান্য
Leave a Reply