ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকাণ্ডের পুরো পরিকল্পনা কীভাবে করা হয়েছে, তা প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ডিবির হারুন বলেন, ‘তাকে (এমপি আনার) হত্যা করার জন্য প্ল্যান ছিল দুই-তিন মাস যাবৎ। তারা প্ল্যান করে এসেছিল তাকে মেরে ফেলবে। এখানে যে মাস্টারমাইন্ড, তার একটি বাসা গুলশানে ও একটি বাসা বসুন্ধরায়। এই দুটি বাসাতে অনেক দিন যাবৎ, প্রায় দুই মাস তারা প্ল্যান করেছে তাকে সরিয়ে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যে কারণই থাকুক, হত্যা করার উদ্দেশ্যে তারা প্রথমে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিল। বাংলাদেশ পুলিশের তথা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দার তদন্ত সক্ষমতা এবং তাদের সফলতার কারণে এর আগেও অনেকগুলো হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে—প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ক্লু ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ, আমরা বের করেছি। তারা তখন বাইরের মাটিতে প্ল্যানটা করেছে। সেই প্ল্যানের পার্ট হিসেবে প্রথমে তারা একটি বাসা ভাড়া নেয় ২৫ তারিখ (এপ্রিল)। বাসা ভাড়ার অ্যাগ্রিমেন্টে বলা আছে, সেখানে তারা ৩০ তারিখ গিয়ে উঠবে। তারা সেই মোতাবেক মাস্টারপ্ল্যান করেছে, তাকে হত্যা করার।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘তিনি (মাস্টারমাইন্ড), যিনি অপরাধটা সংঘঠিত করবেন এবং আরেকজন তাদেরই গার্লফ্রেন্ড। তারা তিনজনে মিলে ৩০ তারিখ বাংলাদেশ থেকে বিমানযোগে চলে যায় কলকাতায়। সেখানে গিয়ে তারা যে বাসা ভাড়া করেছে, সে বাসায় উঠেছে। অর্থাৎ তারা বোঝাতে চেয়েছে, এখানে ফ্যামিলি থাকবে, এখানে অপরাধের কোনো কিছু ঘটবে না।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘দুই মাস যাবৎ তারা এটাও খেয়াল রাখছে, কোন সময় ভিকটিম কলকাতায় যায়। উনি কলকাতায় মাঝে মাঝে যান। আগেও অনেকবার গেছেন। উনি অনেক দিন ছিলেনও একসময়। সেখানে উনার কিছু বন্ধু-বান্ধবও আছে। ১২ তারিখ (মে) উনি চলে যান, সেখানে তিনি বন্ধু গোপালের বাসায় ওঠেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এদিক দিয়ে ওরা আগে থেকেই জানে যে, ভিকটিম ১২ তারিখ যাবে। ৩০ তারিখ সেখানে গিয়ে আরও দুজনকে হায়ার করে। অর্থাৎ এই বাসাতে আসা-যাওয়া করবে এই দুজনকে তারা ঠিক করে। এর মধ্যে একজন জিহাদ অথবা জাহিদ, অপরজন সিয়াম। তারপর উনি (মাস্টারমাইন্ড) সেখানে সবকিছু ঠিক করে, কোন গাড়িতে ইউজ হবে, কাকে কত টাকা দিতে হবে, সেগুলো ঠিকঠাক করে কারা কারা থাকবে, অপরাধ সংশ্লিষ্ট ৫-৬ জনকে রেখে উনি ১০ তারিখ বাংলাদেশে চলে আসে।’
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ভিকটিম যখন ১২ তারিখ গেলেন, ১২ তারিখ গোপালের বাসায় ছিল। ১৩ তারিখ ফয়সাল নামের এক ব্যক্তি তাকে (ভিকটিম) সাদা গাড়িতে রিসিভ করে। ওখান থেকে কিছু দূর গেলে, সেখানে মূল হত্যাকাণ্ড যে সংঘঠিত করেছে—উনি, আমাদের ভিকটিম ও ফয়সাল সেই গাড়িতে ওঠে। ইন্ডিয়ান একজন ড্রাইভার ছিল রাজা, সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না। সে জাস্ট কেরিয়ার। সে তাদেরকে নিয়ে ওই বাসায় যায়। ওই বাসায় যাওয়ার পরপরই আরেকজন ব্যক্তি আছেন মোস্তাফিজ, উনিও ওই বাসায় ঢোকেন। বাসায় ঢোকার পরে জিহাদ অথবা জাহিদ এবং সিয়াম—তারা আগেই ভেতরে ছিল, সেটা ১৩ তারিখ ২টা ৫১ মিনিটে। সেখানে আধা ঘণ্টার মধ্যেই কিন্তু এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।’
Leave a Reply