সারা দিন না খেয়ে থাকার পর ইফতারে আমরা এমন কিছু খেতে চাই, যা থেকে ঝটপট শক্তি পাওয়া যায়। সেদিক থেকে ভেবে দেখলে চিনি মেশানো শরবত ইফতারের জন্য দারুণ একটি পদ। কিন্তু স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় রাখলে চিনি মেশানো শরবত ইফতারে না রাখাই ভালো।
আপনি হয়তো বলবেন, সারা দিন রোজা থাকায় কোনো ক্যালরি গ্রহণ তো হয়ইনি, তাহলে ইফতারে চিনি খেলে ক্ষতি কি? তা ছাড়া চিনি থেকে গ্লুকোজ পাওয়া যায়, এ কথাও তো ঠিক। গ্লুকোজ আমাদের দেহ ও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনও বটে। কিন্তু চিনি থেকে যেভাবে গ্লুকোজ পাওয়া যায়, তা আসলে কারও জন্যই খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
এর বৈজ্ঞানিক কারণও ব্যাখ্যা করলেন এই চিকিৎসক। চিনি মেশানো যেকোনো খাবার গ্রহণ করার পর দ্রুত তা ভেঙে গিয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয়। এই গ্লুকোজ রক্তে চলে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হুট করে বাড়িয়ে দেয়। অল্প সময়ের ব্যবধানেই আবার এই গ্লুকোজ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমা হতে থাকার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে যায়, ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। তখন আমরা আবার ক্ষুধার্ত বোধ করি। আবারও এটা-ওটা খেতে চাই। ফলে আমরা বাড়তি ক্যালরিও গ্রহণ করে ফেলি। আবার দেহের বিভিন্ন স্থানে যে গ্লুকোজ জমা হয়, তার অধিকাংশই চর্বি বা মেদ হিসেবে জমে। তাই চিনি মেশানো শরবত খেলে যেকোনো বয়সেই ওজন বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
তাহলে তো চিনি মেশানো মিষ্টি শরবতের পরিবর্তে বিকল্প খুঁজতেই হয়, বলুন? সেই বিকল্প কি জিরো ক্যালরি চিনি? নাহ, সেটিও খুব একটা ভালো নয়। কারণ এর অন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকতে পারে। ডা. তাসনোভা মাহিন বরং জোর দিলেন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি পানীয়ের প্রতি। তাঁর মতে, খাবারে চিনির মাত্রা রাখতে হবে পরিমিত। মিষ্টান্ন খেলেও তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। আর শরবত বা অন্য পানীয়তে চিনি না দেওয়াই ভালো। মিষ্টি ফলের রস তো লবণ-চিনি ছাড়াই খাওয়া যায়। পানসে বা টক ফলের রসে সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন, যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগ না থাকে। তবে যেকোনো ফলের রসে বিভিন্ন ধরনের মসলা কিংবা ধনেপাতা, পুদিনাপাতার মতো উপকরণ যোগ করে সুস্বাদু পানীয় তৈরি করা সম্ভব। তাহলে ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে, আপনিও থাকবেন সুস্থ।
Leave a Reply