1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন

ব্রিটিশ রাজাদের জাঁকজমকের আড়ালে রয়েছে দুর্দশাগ্রস্ত ইতিহাস

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৬ মে, ২০২৩

ব্রিটেনের রাজা চার্লসের রাজ্যাভিষেক হচ্ছে আজ শনিবার। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ৭০ বছর পর নতুন রাষ্ট্রপ্রধানের অভিষেক প্রত্যক্ষ করবেন ব্রিটিশরা। এ উপলক্ষে শহর ও নগরজুড়ে রাস্তাগুলো পতাকা ও রঙবেরংয়ের কাপড়ে সাজানো হয়েছে, দোকানগুলো স্মৃতিচিহ্ন ও অভিনব পোশাকে ভরে গেছে এবং নাগরিকদের রাজার অভিষেক উদযাপনের জন্য দেশটিতে সোমাবার অতিরিক্ত একদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রাজার অভিষেক নিয়ে অনেকেরই মাথাব্যথা নেই। আবার কারও কারও মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। ইউগভের সাম্প্রতিক এক জরিপে বলা হয়েছে, ৬৪ শতাংশ ব্রিটিশ এই অভিষেক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে খুব বেশি ভাবেননি। যেখানে ৪৮ শতাংশ বলেছেন যে, তাদের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

চার্লস ও রাজকীয় বিষয়াদি সম্বন্ধে লন্ডনের ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির কয়েকজনের অভিমত তুলে ধরা যেতে পারে। ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ, নিপীড়ন ও লুটপাটের কারণে দুর্দশাগ্রস্ত ইতিহাসের অংশ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষ। এমনকি ওই অঞ্চলের মানুষ এখন আর ব্রিটিশ রাজাকে নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দেখতে চায় না।

অবসরপ্রাপ্ত ৮২ বছরের আইভরি জন বলেন, সম্ভবত আমি অভিষেক অনুষ্ঠান দেখব, তবে আমি সেলিব্রেটি নিউজ দেখার জন্য কেউ নই। আমি মনে করি না কেউ আমার থেকে সেরা। আমি নিজেকে নিয়ে উদযাপন করি, আমি অন্যদের নিয়ে উদযাপন করি না। চার্লসের বিষয়ে তার মত, আমি মনে করি তিনি ঠিক আছেন। তবে তিনি মেগান ও হ্যারির সঙ্গে যে আচারণ করেছেন তা অপমানজনক। আমি জানি না তবে আমি মনে করি সেখানে কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব বা বর্ণবাদী বৈষম্য রয়েছে। রাজতন্ত্র সম্পর্কে তাকে খুব সন্তুষ্ট মনে হয়নি। তিনি জানান, আমি মানুষের সঙ্গে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে আচরণ করি। এমনকি আমি যদি রাজাকে দেখতে পাই আমি তার সঙ্গে তার প্রাপ্য সম্মান অনুযায়ী আচরণ করব। ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর ব্রিটিশ রাজাকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে অপসারণের বিষয়ে তার অভিমত, ক্যারিবিয়ানদের তাদের নিজস্ব বিষয় থাকা উচিত। তাদের ঐতিহ্য উদযাপনের অনেক কিছু আছে। যেমন ইংল্যান্ডে আছে রাজপরিবারের ঐতিহ্য।

শিক্ষা আইনের জন্য স্বাধীন আইনজীবী চেরিল ফিনিক্সের অভিষেক অনুষ্ঠান দেখার কোনো আগ্রহ নেই। রাজা চার্লস সম্পর্কে তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি যা বুঝতে পেরেছি তিনি দাস ব্যবসার চারপাশের ইতিহাসের দিকে নজর রাখছেন। এটা দেখা আরও মজার হবে তিনি কে এবং তিনি কিসের জন্য। আমি মনে করি তিনি বর্ণবাদী মন্তব্য সম্বন্ধে খুব কমই উদ্বিগ্ন, যেগুলো বছরের পর বছর চলছে। রাজতন্ত্র সম্বন্ধে বলতে গিয়ে তিনি জানান, ব্রিটিশদের ইতিহাস ঔপনিবেশিকতা, বর্ণবাদ, দাসত্ব ও দুর্নীতির ওপর ভিত্তি করে রচিত। দুর্ভাগ্যবশত ইতিবাচক তেমন কিছু নেই যা আমি সত্যিই বলতে পারি। ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর রাজতন্ত্র বিলোপ সম্বন্ধে তার দর্শন, আমাদের বন্ধন ছিন্ন করতে হবে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা রাজতন্ত্র থেকে স্বাধীন হয়ে উঠি। আমি মনে করি এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা তাদের সামরিক বাহিনীকে আমাদের দেশ থেকে বের করে নিতে বলি। সেখানে তাদের কোনো কাজ নেই।

৬১ বছর বয়সী অভিনেতা, সৃষ্টিশীল শিল্পী ও শিক্ষক ডোনাল্ড ওয়ারও রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান দেখার কোনো আগ্রহ নেই। চার্লস সম্পর্কে তার মূল্যায়ন হচ্ছে, তিনি তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চান। তিনি আরও আধুনিক হতে চান, কিন্তু আমি জানি না তার আসলেই অনেক শক্তি বা ওজন আছে কিনা (তার মা রানি ২য় এলিজাবেথের মতো)। তার (রানি) নীরবতা এবং তার নাম প্রকাশ না করার কারণ তাকে আরও রহস্যময়তা দিয়েছেÑ যদি কোনো সমস্যা হতো তবে তিনি সর্বদা তার মুখ বন্ধ রাখতেন এবং মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে মোকাবিলা করতেন। এটা এখন একটি ভিন্ন প্রজন্ম। রাজা চার্লস নতুন এক যুগে প্রবেশ করছেন। আমি জানি না তার একইরকম গুরুত্ব ও সম্মান আছে কিনা যা রানির ছিল। দাসত্বের কারণে তিনি রাজতন্ত্রের পক্ষেও নয় বলেও জানান। তিনি বলেন, দাসত্বের সময় থেকে এখনো প্রচুর অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে। আমি সত্যিই রাজকীয় কেউ নই যদি আমি সম্পূর্ণ সৎ হই। আমি মনে করি যে প্রজন্মগুলো আমাদের পেছনে আসছে, যারা আমাদের ভাগ্নে বা আমাদের ছোট ভাইদের মতো তারা সেই ব্যথা অনুভব করে যা আমরা অতিক্রম করেছি। তারা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তারা বন্ধন ছিন্ন করতে চায়, তারা আর আদেশ মানতে চায় না। আমাদের দেশ : নতুন নিয়ম, নতুন স্কুল। আসুন আমাদের সমস্যাগুলো নিজেরাই সমাধান করি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্যা তারা আক্রমণ এবং লুণ্ঠন করেছিল। যে ইতিহাস এতদিন লুকিয়ে ছিল সে সম্পর্কে তরুণ প্রজন্ম একটু বেশিই জানে।

৬৭ বছরের অবসরপ্রাপ্ত মেরল রিড অভিষেক অনুষ্ঠান দেখবেন না। রাজার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি তাদের স্বীকৃতি দিই না। আমি তাদের সম্মান করি না। আমার ভালো কিছু নেই। যতদূর আমি জানি, তাদের অস্তিত্ব নেই। রাজতন্ত্রে তার আস্থা নেই জানিয়ে বলেন, আমি রাজতন্ত্রের কথা ভাবি না, কারণ রাজতন্ত্র আমাদের মতো দরিদ্র মানুষের জন্য নয়। আমি মনে করি এটা সময়ের অপচয়। তারা সব সম্পত্তি চুরি করে এবং এসব সোনা, ধন, হীরা নিয়ে টাওয়ারে বসে থাকে। যদি তারা এই দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে এসব ফিরিয়ে দেয় তবে তারা দরিদ্র এবং ক্ষুধার্ত হবে না। আপনি এসব দিয়ে কী করছেন? আপনি এসব সঙ্গে নিতে পারবেন না। রানি মারা গেছেন। তিনি তার সঙ্গে কী নিয়ে গেছেন? কিছুই না। ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর রাজতন্ত্র অপসারণের বিষয়ে তার বক্তব্য, ভালো, তাদের এটা অনেক আগেই করা উচিত ছিল।

৫৪ বছর বয়সী ব্যবসায়ী চুকুমা ওয়াগাদুগু রাজার রাজ্যাভিষেকের কিছু দিক দেখবেন। রাজা চার্লস সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি যখন বড় হচ্ছিলাম, তখন তিনি একজন প্লেবয় লোকের মতো ছিলেন, যিনি সব নারীকে পান। এর বাইরে তার সম্পর্কে আমার সত্যিই কোনো মতামত ছিল না। কিন্তু সেটা পরিবর্তন হতে শুরু করে যখন তিনি ডায়ানাকে বিয়ে করেছিলেন এবং আমি বিয়ে দেখেছিলামও। সেই বিবাহের ভাঙন এবং তিনি যেভাবে তার সঙ্গে আচরণ করতেন তা আমি পছন্দ করিনি। তিনি সম্ভবত রাজপরিবারের একটি ক্ষতিকর দিককে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। রাজতন্ত্র সম্পর্কে তার মত, তারা নিঃসন্দেহে উপনিবেশবাদ, দাসত্বের প্রতিনিধিত্ব করে। আফ্রিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে কিছু জঘন্য কাজ সংঘটিত হয়েছে বলে আমি বিবেচনা করব। ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর রাজাকে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে অপসারণ করার বিষয়ে তার মন্তব্য, যখনই আমি কমনওয়েলথ শব্দটি শুনি, আমার প্রায়ই মনে হয় এটি সাধারণ ছিল না। এটি এমন একটি সংগঠন যা দাসত্ব, ঔপনিবেশিকতা ও নব্য উপনিবেশবাদ থেকে উদ্ভূত।

তবে ব্যতিক্রমী অনেকও আছেন যেমন ৬৩ বছরের সমাজকর্মী মার্ভেলি মায়ার্স। তিনি রাজ্যাভিষেক দেখার বিষয়ে ভীষণ আগ্রহী। তার মতে, আপনি একটি নির্দিষ্ট উপায়ে বড় হন এবং সেই জিনিসগুলোর জন্য আপনি উন্মুখ হয়ে থাকেন। তাই হ্যাঁ, আমি অবশ্যই দেখব। রাজা চার্লস সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সব প্রবীণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু আমার স্বামী বলেন, চার্লস বৃদ্ধ হচ্ছেন এবং একজন অল্প বয়স্ক ব্যক্তি থাকা আরও উপকারী হতে পারে। ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান থেকে রাজাকে অপসারণ করার বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি, এটা বার্বাডোজে ইতোমধ্যে করা হয়েছে। আমি জ্যামাইকা থেকে এসেছি এবং তারা এটি সম্পর্কে চিন্তা করছে, কিন্তু আমার দৃষ্টিভঙ্গি হলো তারা কি প্রস্তুত? আমার দেশে এই মুহূর্তে নেতৃত্বের সংকট, অপরাধসহ অনেক কিছু ঘটছে।

মার্ভেলির মতো ৭১ বছরের অবসরপ্রাপ্ত হাওয়ার্ড ফেসিও রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান দেখবেন। তিনি চার্লসকেও পছন্দ করেন। তার মতে, তিনি অনেক ভালো কাজ করেন। যে হাত আমাকে খাওয়ায় তা আমি কামড়াতে পারি না। আমি আমার বোনকে ফোন করেছিলাম এবং তিনি বলেছিলেন যে, (রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মতো) যা ইংল্যান্ডে আছে তা জ্যামাইকায় নেই। রাজতন্ত্র সম্পর্কেও ইতিবাচক তিনি। বলেন, আমি তাদের পছন্দ করি। আমি যখন জ্যামাইকায় ছিলাম তখন ব্রিটেনের রানি (২য় এলিজাবেথ) এখানে এসেছিলেন এবং তিনি চারপাশে গাড়ি চালিয়ে সবার প্রতি হাত নেড়েছিলেন। তার মতে, রানি যখন জ্যামাইকা চালাতেন, তখন ভালো ছিল।

জুয়েল জনি : সহসম্পাদক, আমাদের সময়

(তথ্য সূত্র : আল জাজিরা)

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com