অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর জমি সংক্রান্ত ঝামেলা চরমে পৌঁছেছে। শান্তিনিকেতনের পৈতৃক বাসভবন প্রতীচী থেকে এ নোবেলজয়ীকে উচ্ছেদ করতে চাইছে বিশ্বভারতী। এই মর্মে নোটিশও দেওয়া হয়েছে তাকে। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এ উচ্ছেদের মুখোমুখি দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়; সরাসরি অবস্থান করে উচ্ছেদ আটকাতে সেখানকার মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহাকে নির্দেশ দিলেন তিনি।
হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠক করার ফাঁকে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। যা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
এদিকে বিশ্বভারতী নিজের জেদের কাছে অনড়। তারা অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদ করবেই। তবে অমর্ত্য সেন নথি দেখিয়ে বারবার দাবি করছেন, ওই জমি তার। এখনও জমি তার বাবার নামে রয়েছে। তারপরও বলপূর্বক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে এবার কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত দিয়েছে রাজ্য সরকার।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন, বিশ্বভারতী যদি উচ্ছেদ করতে যায় তাহলে অমর্ত্য সেনের বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসতে হবে। দলের নেতাকর্মীর পাশাপাশি বাউলদেরও এই কাজে যুক্ত করার কথা বলেন তিনি।
দু’পক্ষের এ অবস্থানে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্বভারতীর উচ্ছেদ নোটিশে আগামী ৬ মে জমি খালি করার শেষ দিন হিসাবে ধার্য করা হয়েছে। যদি প্রয়োজন পড়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বলপ্রয়োগ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ জন্য পাল্টা আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে।
প্রথম থেকেই অমর্ত্য সেনের পাশে রয়েছেন মমতা। এর আগে তিনি নিজে গিয়ে অমর্ত্য সেনের হাতে নথি তুলে দিয়ে আসেন। কিন্তু তারপরও উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সেসব নথি মানতে নারাজ।
এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছিলেন, বাড়ি ভাঙার চেষ্টা হলে বুলডোজারের সামনে বসে তা আটকাবেন তিনি। মঙ্গলবার তিনি আবার বুঝিয়ে দিলেন, এই আন্দোলনে নোবেলজয়ীর পাশেই রয়েছেন তিনি।
অমর্ত্য সেন দাবি করে আসছেন, ওই জমি ১৯৪৩ সালে তার বাবা আশুতোষ সেনকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইজারা দিয়েছিল। সেই জমি এখন অমর্ত্য সেনের নামে বীরভূমের বোলপুরের ভূমি দপ্তর থেকে মিউটেশনও করা হয়েছে। সুতরাং, অবৈধ দখলের প্রশ্ন নেই। তবে বর্তমানে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি তুলেছে, ওই ১ দশমিক ৩৮ একর জমির মধ্যে ১৩ ডেসিমেল অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।
অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী বলেন, ‘অমর্ত্য সেন কোনো জমি বেআইনিভাবে দখল করেননি। ওই জমির কিছু অংশ ইজারা নেওয়া, কিছু অংশ নিজেদের কেনা। সুতরাং, এই জমি থেকে উচ্ছেদের কোনো কথা উঠতে পারে না।’
Leave a Reply