অনেকেই রাতকানা রোগে ভোগে। এ রোগ বলতে বোঝায়, রাতে বা কম আলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম দেখা (দিনে বা আলোয় তেমন দৃষ্টিসমস্যা হয় না)। দেখার জন্য আসলে আমাদের চোখে একই সঙ্গে দুটি সিস্টেম বিদ্যমান। দিনের আলোয় দেখার জন্য একটি এবং কম আলো বা অন্ধকারে দেখার জন্য ভিন্নতর একটি সিস্টেম কাজ করে। দেখার জন্য চোখ আলোর মাধ্যমে বস্তু থেকে প্রাথমিক সঙ্কেত বা সিগন্যাল সংগ্রহ করে আর কাজটি করে ফটোরিসেপ্টর নামক রেটিনার বিশেষ ধরনের কোষ। এই ফটোরিসেপ্টর আবার দুধরনের- কোণ ফটোরিসেপ্টর ও রড ফটোরিসেপ্টর। কোণ ফটোরিসেপ্টর দিনের বেলা বা অধিকতর আলোয় সংবেদনশীল। আর রড ফটোরিসেপ্টর অন্ধকার বা স্বল্প আলোয় সংবেদনশীল। একটি সক্রিয় হলে অন্যটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
দিনের বেলা যখন চোখে আলো আপতিত হয়, তখন দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়। একই সময়ে কিছু রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হলেও দ্রুত এটি সংবেদনশীলতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তখন একমাত্র কোণ ফটোরিসেপ্টর সক্রিয় থাকে। এমতাবস্থায় দেখার সব কাজ কোণ ফটোরিসেপ্টরের মাধ্যমে হয়ে থাকে। দিন শেষে বা আলো থেকে যখন আমরা অন্ধকার বা কম আলোয় প্রবেশ করি, তখন উল্টো ঘটনা ঘটে।
এখানে দ্রুত কোণ ফটোরিসেপ্টর তার সংবেদনশীলতা হারিয়ে ফেলে এবং রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হতে থাকে। ৫-১০ মিনিট সময়ের ব্যবধানে রড ফটোরিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা কোণ ছাড়িয়ে যায় এবং ১৫-৩০ মিনিটের সময়ের মধ্যে রড ফটোরিসেপ্টর উজ্জীবিত হয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে দেখার জন্য শতভাগ প্রস্তুত হয়ে যায়। এটির মানে হলো, ডার্ক এডাপ্টেশন বা অন্ধাকারে মানিয়ে নেওয়া। রাতের বেলায় গাড়ি চালক গাড়ির ভেতরের আলো নিভিয়ে দিয়ে আসলে অন্ধকারে চোখ মানিয়ে নিতে তথা রড ফটোরিসেপ্টর সিস্টেম সক্রিয় করে থাকে। এখন যদি কোনো কারণে রড সিস্টেম বা রড ফটোরিসেপ্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে রাতে দেখার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। এর নামই রাতকানা বা নিক্টেলোপিয়া।
রাতকানা রোগের কারণ : শিশুর ক্ষেত্রে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতিজনিত কারণে চোখের রড সিস্টেম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে শিশুর ডায়রিয়াজনিত কারণে হঠাৎ করে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি তীব্র হলে এ সমস্যাটি দেখা দেয়। ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইনের কারণে এ সমস্যার তীব্রতা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কম। তবে এখনো এটি ঝুঁকিমুক্ত নয়।
চোখের রোগ : চোখের এমন কিছু সমস্যা আছে যেগুলোয় রড সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রাতকানা রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা (আরপি), হাই মায়োপিয়া, রেটিনাল ডিস্ট্রোফি ইত্যাদি।
চিকিৎসা : উচ্চমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ ব্যবহারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে। প্রাণিজাত খাবার, যেমনÑ কলিজা, শাকসবজি, গাজর, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়ায় ভিটামিন ‘এ’ থাকে।
সতর্কতা : ধূমপান ও রেটিনো টক্সিক কিছু ওষুধ, যেমন- হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন (রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ইত্যাদিতে ব্যবহৃত), টেমোক্সিফেন (ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত) সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘এ’ বা বিটা কেরোটিন দীর্ঘদিন ব্যবহারে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধূমপান ও বিটা কেরোটিন সাপ্লিমেন্ট দীর্ঘদিন একসঙ্গে চলতে থাকলেও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে। কাজেই রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ামাত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তাতে চোখের রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন
প্রাক্তন সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল
চেম্বার : আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার
৩৮/৩-৪, রিং রোড, শ্যামলী, ঢাকা
Leave a Reply