ইসলামের সংরক্ষণ দুটি দিক। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। এর মধ্যে প্রথমটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি প্রথমটি নিশ্চিত করতে পারি, তবে ইসলামবিদ্বেষীরা নিজ থেকেই পরাজিত হবে।
তা না করে যদি আমরা বাহ্যিক সংরক্ষণে মনোযোগ দিই, তবে তা হবে এমন যে নিজের কাছে অস্ত্র নেই, সম্পদ নেই তার পরও শত্রুর মোকাবেলায় লিপ্ত হলাম। আমি তলোয়ার, বন্দুক, তোপ ও কামানকে হাতিয়ার বলি না, বরং হাতিয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য আমল। আমাদের কাছে আমল নেই। আমাদের আমল, চরিত্র ও লেনদেন সম্পূর্ণ দূষিত হয়ে গেছে। যদি আমাদের এই আমলের হাতিয়ার ধারালো হয় তবে অন্যরা কখনো আক্রমণ করবে না, আক্রমণের সাহস করবে না। আল্লাহর শপথ! যদি আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভালো হতো, আমল ঠিক হতো তবে কেউ কোনো দিন মুসলমানদের প্রতি চোখ তুলে তাকাবার সাহস করত না।
এ জন্য আমি বলি, কারো সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হওয়ার খুব দরকার নেই, বরং তুমি নিজেকে এমনভাবে প্রস্তুত করো যেন তোমার দিকে কেউ চোখ তোলার সাহস না করে। যদি তুমি তোমার আমল ঠিক করো, পুরোপুরি শরিয়তের অনুসরণ করো, নিজের আচার-আচরণ, লেনদেন ও চরিত্র ঠিক করে নাও, কেউ তোমার সঙ্গে শত্রুতা করার সাহস করবে না। অর্থাৎ প্রথমে নিজের অভ্যন্তরীণ দিক ঠিক করো এবং এর প্রয়োজনীয়তাই বেশি। নিজেকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে মুসলমানের সেই প্রচেষ্টা বেশি উপকারী হবে, যার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন। তা হলো প্রথমে নিজেকে সংশোধন করো, বিশ্বাস ও আমল সুন্দর করো।
নিজের আমল সুন্দর করার উপকার হলো অন্যরা তোমাকে ধমকানো ও তোমার কাজে হস্তক্ষেপ করার সাহস করবে না। এটা ব্যক্তিগত উপকার। এই কাজের দ্বিতীয় উপকার হলো ইসলামের প্রসার। মুসলমানের সুন্দর আমল ইসলাম প্রসারে ভূমিকা রাখে। কেননা ইসলামের সৌন্দর্য এমন যে তা দেখে অন্যরা মুগ্ধ হয় এবং ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাদের মুখে ডাকারও প্রয়োজন হবে না। অনেকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের অভিযোগ করে। কিন্তু তাদের কাছে প্রশ্ন ধর্মান্তরের পর মানুষ কেন আজীবন মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করে? কেন তারা আগের ধর্মে ফিরে যায় না? প্রকৃতপক্ষে ইসলাম এত মনোহর যে তাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মতো হবে না। ’ (সুরা : মুহাম্মদ, আয়াত : ৩৮)
অর্থাৎ তোমরা যদি দ্বিনের ব্যাপারে বিমুখ হও, দ্বিনের চর্চা ও তার সেবা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যারা দ্বিনের সেবা করবে। এখন যদি কারো মনে এই সংশয় তৈরি হয় যে আল্লাহ ভিন্ন সম্প্রদায় কিভাবে তৈরি করবেন? তাদের জবাবে বলব, তোমরা চোখ খুলে দেখো সমাজে পরিবর্তনের ধারা সব সময় অব্যাহত আছে। একদিকে একদল মানুষ ইসলামের অনুশাসন ছেড়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে অমুসলিমরা মুসলিম হয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে দ্বিন পালন করছে। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় ইসলাম কোনো মানুষের মুখাপেক্ষী নয়।
‘আল-ইতমাম লি-নিমাতিল ইসলাম’ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর
Leave a Reply