1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

দাম বেড়ে যায় চাঁদাবাজিতে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০২২

সড়ক-মহাসড়ক ও বাজারকেন্দ্রিক নানামুখী চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্য ও তরিতরকারির দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনসহ সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও দৃশ্যত কোনো সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। দামের এই পাগলা ঘোড়ার কবলে পড়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে নিমেষেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পণ্য পরিবহনের অতিরিক্ত খরচ, ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি, অব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি পণ্য হাতবদলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভোগ্যপণ্যের বাজার দিন দিন অস্থির হয়ে উঠছে। এদিকে দ্রব্যমূল্যের উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় সংসদেও। গতকাল বাণিজ্য সংগঠন বিল নিয়ে আলোচনার সময় তোপের মুখে পড়েন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাজার নিয়ন্ত্রণে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংসদ সদস্যরা। বিরোধীদলীয় সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এর মাসুল দিচ্ছে জনগণ। ব্যবসায়ী ও পরিবহন চালকদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বিভিন্ন ফেরিঘাট, ওজন স্টেশন, বাজার কমিটি, পরিবহন সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, এমনকি থানাপুলিশের নামেও তোলা হচ্ছে চাঁদার টাকা। এই ১০ খাতে চাঁদাবাজির ফলে কৃষকের জমি থেকে উঠে আসার পর জায়গায় জায়গায় হাতবদল হতে হতে ক্রেতার কাছে পৌঁছতেই ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ। যার প্রভাব পড়ছে সরাসরি ক্রেতাদের ওপর। সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে সেখানকার ব্যবসায়ী ও চালকদের সঙ্গে কথা বলেও এই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের চেষ্টায় নড়েচড়ে বসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে কথা বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। স্বরাষ্টমন্ত্রী তাকে চাঁদাবাজির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার একদিনই পরই গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক নির্দেশনা জারি হয়। বলা হয়, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা তথ্য ছাড়া সড়ক-মহাসড়কের কোথাও পণ্যবাহী গাড়ি থামানো যাবে না।

চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে কথা হয় পাইকারি পেঁয়াজ মোকামের মালিক কাজী মোস্তফার সঙ্গে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার বাজার থেকে সোমবার ২৪ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছেন তিনি। পথেই তিন জায়গায় তাকে ২৭০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। সড়কপথে সর্বশেষ ফার্মগেটের খামারবাড়ী এলাকায় তার ট্রাকচালক কর্তব্যরত সার্জেন্টকে চাঁদা দিয়েছেন ১ হাজার টাকা। গাড়ির কাগজ ঠিক থাক, আর না থাকÑ এই টাকা দেওয়া প্রত্যেক পণ্যবাহী পরিবহনের চালকদের জন্য বাধ্যতামূলক। এরপর কারওয়ানবাজারে ট্রাক থামতেই পুলিশ-নেতাদের নামে লাইনম্যানদের দিতে হয়েছে ১০০ টাকা। অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ৩০ টাকা গুনতে হয়েছে তাকে। এর আগে ফেরিতে উঠতে গাড়ির সিরিয়াল পেতে ‘স্পেশাল’ টাকার নামে কোনো রসিদ ছাড়াই অতিরিক্ত ১ হাজার ৫শ টাকা ঘাটের চাঁদাবাজ বাহিনীকে দিতে হয়েছে কাজী মোস্তফার ট্রাকচালককে। সব মিলিয়ে তাকে পণ্য মোকাম পর্যন্ত আনতে বাড়তি গুনতে হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। এই টাকা না দিলে লাইনম্যানদের সৃষ্ট কৃত্রিম যানজটে পড়ে চার-পাঁচদিনও ঘাটে থাকার আশঙ্কা থাকে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে। এতে করে কাঁচামালের ব্যাপক পচন ধরে ট্রাকের মধ্যেই। হয়রানি এড়াতে বাধ্য হয়েই প্রতিদিন এই স্পেশাল টাকা দিয়ে ফেরি পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন পরিবহন চালকরা। এভাবে প্রতিদিনই সহস্রাধিক ট্রাক-মিনিট্রাক থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে দিতে হচ্ছে। ফলে চাঁদা বাবদ এই বাড়তি খরচের খড়গ গিয়ে পড়ছে ভোক্তাদের ওপর। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। আর চাহিদা না থাকলে অথবা বাড়তি মজুদের কারণে কখনো কখনো এই লোকসানের ভার ব্যবসায়ীকে বইতে হয় বলেও জানান ব্যবসায়ী কাজী মোস্তফা।

কারওয়ানবাজারে কয়েকজন ব্যবসায়ী ও চালক জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে আসার পর গাড়ি থেকে নামিয়ে রাস্তায় মালামাল রেখে বিক্রি করলেও প্রতি বস্তার জন্য লাইনম্যানকে দিতে হয় ১০ টাকা করে। হাজার হাজার বস্তা থেকে কয়েক ঘণ্টায়ই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা। ট্রাক থামলে পুলিশ-নেতাদের নামে ১০০-১৫০ টাকা এবং বস্তাপ্রতি ১০ টাকা চাঁদা তোলেন লাইনম্যান খ্যাত ফজলুল হক, ফরমা মিজান, রনি, হামিদ, মিঠু, বিল্লাল হোসেন, আব্বাস, খোকন ও জাহাঙ্গীর। এদের এক একটি গ্রæপে চাঁদা তোলার কাজে নিয়োজিত আছেন আরও ৩ থেকে ৪ জন জুনিয়র লাইনম্যান। ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের মদদপুষ্ট হওয়ায় তারা প্রকাশ্যে চাঁদা তুললেও তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পান না ব্যবসায়ী-চালকরা।

মধ্যরাতে পেট্রোবাংলার সামনে ট্রাকচালক মো. রুহুল এই প্রতিবেদককে জানান, আগে পথে পথে চালকদের চাঁদা দিতে হতো পুলিশের নামে। এখন ‘ঘুপসি চাঁদাবাজি’ চলছে। যে ট্রাক মালিক-চালক ‘মান্থলি’ (৩০ দিন) হিসেবে এককালীন ২২শ টাকা দেবেন, তাকে পৃষ্ঠার উল্টোপৃষ্ঠে একজন পুলিশ সদস্যের নম্বর লিখে একটি টোকেন দেওয়া হয়। এই টোকেন দেখালে একমাসের জন্য রাস্তায় কোনো সার্জেন্ট ওই গাড়ি আটকাবেন না। যারা এই টোকেন নেবেন না, তাদের হয়রানির শিকার হতে হবে পথে পথে।

নিত্যপণ্যের মজুদ, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে সম্প্রতি এফবিসিসিআই আয়োজিত এক সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি হচ্ছে। বিষয়টি অনেকটা সরকারিভাবে টোল সংগ্রহের মতো হয়ে গেছে। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ ও কাঁচাবাজারে প্রভাবশালীদের ‘গুপ্ত’ চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় কৃষকরা যে বাঁধাকপি গড়ে সাড়ে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করেন, সেই বাঁধাকপি ঢাকায় এসে খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৩৮ টাকায়। এই দর কৃষকপর্যায়ে বিক্রি হওয়া দামের প্রায় তিনগুণ। একইভাবে কৃষকের কাছ থেকে ১৫ টাকা দরে কেনা বেগুন ঢাকায় এসে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। শুধু বাঁধাকপি কিংবা বেগুন নয়, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও কাঁচামরিচের মতো অন্যান্য সবজিও কৃষক পর্যায়ের দামের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ দরে বিক্রি হয় ঢাকার বাজারে।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এগুলো নিয়ে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগের মধ্যে আছেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারে দামের পার্থক্যের অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি চাঁদাবাজি। সদিচ্ছা থাকলে চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ না হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান জানান, পবিত্র রমজান ও আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ বা তথ্য ছাড়া মহাসড়ক অথবা সড়কে পণ্যবাহী কোনো গাড়ি থামানো যাবে না। অতিরিক্ত আইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এম খুরশীদ হোসেনের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (গতকাল) সকালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অনুষ্ঠিত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সভায় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রাজধানীতে পেঁয়াজ-রসুনের বৃহৎ পাইকারি বাজার শ্যামবাজারের বিক্রমপুর ট্রেডার্সের মো. খোকন আমাদের সময়কে জনান, পাবনা থেকে শ্যামবাজারে এক বস্তা (৭০ থেকে ৮০ কেজি) পেঁয়াজ আনতে আমাদের খরচ হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। কুষ্টিয়া থেকে আনতে এ খরচ ৮০ টাকা পর্যন্ত। বস্তাপ্রতি যে ৪০ টাকা বাড়তি পরিবহন খরচ হচ্ছে, তাতে কেজিতে পণ্যের দাম এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।

শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজেদ বলেন, রাজধানীতে পণ্য আমদানিতে রাস্তায় কোনো কোনো পয়েন্টে কী পরিমাণ চাঁদা দিতে হয়- এর হিসাব আমাদের কাছে নেই। ট্রাক মালিক ও চালকরা তা ভালো বলতে পারবেন।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে ফল পৌঁছাতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয় বলে খুচরায় দাম অনেক বাড়ছে বলে জানান বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রæটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফআইএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ফল পরিবহনে রাস্তার নানা জায়গায় চাঁদাবাজি অবশ্যই পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গত ২৮ মার্চ এক আলোচনাসভায় সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, এখন শ্রমিক-মালিক সংস্থাগুলোর চাঁদা আদায় ৮০ ভাগ কমে গেছে। কিন্তু সরকারি কিছু সংস্থা চাঁদাবাজি শুরু করেছে। দেশে সিটি করপোরেশন-পৌরসভা কর্তৃপক্ষ টোল আদায়ের নামে সড়কে চাঁদাবাজি করছে।

পাবনার সবজির ব্যাপারী মো. জিয়াউল হক বলেন, নাটোরের বনপাড়া থেকে শুরু করে ঢাকার আমিনবাজার, গাবতলী ব্রিজ- অনেকগুলো পয়েন্টে ট্রাকপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। বিভিন্ন পরিচয় ও কারণ দেখিয়ে এ চাঁদা আদায় করা হয়। এর মধ্যে পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়।

কারওয়ানবাজারের চাটখিল রাইস এজেন্সির মো. বিলাল হোসেন বলেন, চাল পরিবহনে সড়কে চাঁদার জন্য ট্রাক মালিকরা আমাদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। এতে পরিবহন খরচ বাড়ছে, যা গিয়ে যুক্ত হচ্ছে চালের দামের সঙ্গে। বিল্লাল জানান, ১৪ টনের একটি ট্রাকে ২৬০ বস্তা চাল আনা যায়। এতে ট্রাকপ্রতি খরচ করতে হচ্ছে ১৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার টাকা কেবল চাঁদার পেছনেই চলে যায়।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা মিলগেটে, আড়তে ও বাজারে তদারকি অভিযান পরিচালনা করে। কিন্তু পণ্যের বাড়তি দামের পেছনে অন্যতম কারন ‘চাঁদাবাজির’ বিষয়ে সরকারের নজরদারি কম। এ বিষয়টিকে কম গুরুত্ব দিলে হবে না। কারণ চাঁদাবাজির ফলে পণ্যের পরিবহন খরচ বাড়ছে, যা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর মাসুল দিতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

সবজির মতো পচনশীল কাঁচাপণ্যের দাম কীভাবে আকাশছোঁয়া হয়ে যায় তার নেপথ্য কাহিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরা হয়েছে এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। নমুনা হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহীর বানেশ্বর বাজার থেকে ঢাকার কারওয়ানবাজার পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে ট্রাক ভাড়া ১৭ হাজার টাকা। তবে রাজশাহীর আমচত্বর, বেলপুকুরিয়া, নাটোর বাইপাস, এলেঙ্গা বাইপাস, টাঙ্গাইল বাইপাস, কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় দেড় হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। যশোর থেকে ঢাকার কারওয়ানবাজার পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া ২৪ হাজার টাকা। এই পথেও কয়েক জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। প্রতিবেদনে ‘রাস্তা খরচ’ খাতে পুলিশের চাঁদার কথাও বলা হয়েছে।

সবজির বাজার নিয়ে স¤প্রতি দেওয়া পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বগুড়া থেকে ঢাকায় আসতে অন্তত সাতটি স্থানে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এর মধ্যে তিনটি স্থানে মাসিক হিসেবে পুলিশকে দিতে হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। বাকি চারটি স্থানে প্রতি ট্রিপে সর্বোচ্চ সাড়ে ৮০০ টাকা দিতে হয়। বগুড়ার মোকাম থেকে সবজি আনতে প্রতিটি ট্রাককে বগুড়া পৌরসভার ৫০ টাকা টোল দিয়ে যাত্রা শুরু করতে হয়। এরপর শেরপুরে ৫০, সিরাজগঞ্জ ট্রাক মালিক-শ্রমিক সমিতিকে ৫০, সিরাজগঞ্জ শহরে গাড়ি ঢুকলে ৫০, সিরাজগঞ্জ মোড় হাইওয়ে পুলিশ খরচ (মাসিক) ৫০০, যমুনা সেতু গোলচত্বর হাইওয়ে পুলিশ খরচ (মাসিক) ৫০০, টাঙ্গাইল মোড় হাইওয়ে পুলিশ খরচ (মাসিক) ৫০০, সাভারের আমিনবাজারে (লাঠিয়াল বাহিনী) প্রতি ট্রিপ ১০০ থেকে ২০০, কারওয়ানবাজার পার্কিংয়ে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সবজির বিপণনে পরিবহন চাঁদাবাজি, মধ্যস্বত্বভোগীসহ অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান করতে পারলে সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।

চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রতিনিধি কাজী আবদুল হান্নান বলেন, সরবরাহে কোনো ঘাটতি না থাকলেও খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ার অন্যতম কারণ চাঁদাবাজি।

গত সোমবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির প্রথম সভা শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সড়ক-মহাসড়কে একটা গ্রুপ নয়, বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করে। এ বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ব্যবসায়ীরাও সচেতন আছেন। সড়কে পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com