1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৪০ অপরাহ্ন

কোটি পরিবারে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু আজ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২০ মার্চ, ২০২২

সারাদেশে আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকিমূল্যের নিত্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম। এরই মধ্যে পণ্য পৌঁছে গেছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে। আসন্ন রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও স্বল্প আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করাই এই কার্যক্রমের উদ্দেশ্য। দুই দফায় মোট ১ কোটি পরিবারে এসব পণ্য পাবে। উপকারভোগীর তালিকা করা হয়েছে স্থানীয় জনসংখ্যার দারিদ্র্যের সূচকের ভিত্তিতে। তালিকাভুক্তদের দেওয়া হয়েছে ‘ফ্যামিলি কার্ড’। স্থানীয় ডিলারের কাছ থেকে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য নিতে হলে এই কার্ড দেখাতে হবে।

এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও প্রকৃত জনগোষ্ঠী এই সুবিধা পাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, তালিকা তৈরিতে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বজনপ্রীতি হলে এই উদ্যোগ নিয়ে কথা উঠতে পারে। অতীতেও নগদ সহায়তা বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, ‘এই উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক।

তবে প্রকৃত গরিবরা এ সুবিধা পাবেন কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সরকারের হাতে প্রকৃত দরিদ্র লোকের নাম-ঠিকানা নেই। দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটি আলোর মুখ দেখেনি। এটি করতে পারলে এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সহজ হতো।’

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘টিসিবি এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়মূল্যে পণ্য দেবে। অর্থাৎ ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। এখন প্রশ্ন হলো, স্থানীয় বাজার থেকে কিনে এসব পণ্য বিতরণ করলে সরবরাহব্যবস্থার উন্নতি হবে কিনা। যদি দেশের বাইরে থেকে এনে পণ্য দেওয়া হয়, তবে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে, বাজারে মূল্যের ওপর প্রভাব পড়বে। তবে এটি ভালো উদ্যোগ। এ কার্যক্রম আরও জোরদার করতে পারলে ভালো হবে।’

ফ্যামিলি কার্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ আমাদের সময়কে বলেন, ‘এত বড় তালিকা তৈরিতে কিছুটা ভুলত্রুটি থাকতে পারে। তবে অনিয়ম হলে কার্ড বাতিল করে নতুন কার্ড ইস্যু করা হবে।’

আজ থেকে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ের পণ্য বিক্রি করা হবে। দ্বিতীয় দফা চলবে ৩ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। আজ সকাল ১০টায় বাণিজ্য সচিব এ কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন।

এর আগে গত ৬ মার্চ থেকে ট্রাকসেলের মাধ্যমে রাজধানীতে পণ্য বিক্রি শুরু হয়। প্রতিটি ওয়ার্ডে এসব পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১৫০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাক পণ্য বিতরণ করছে। মোট ১২ লাখ পরিবারের লক্ষ্যমাত্রা ধরে পণ্য বিক্রি শুরু হয়।

টিসিবির এই কর্মসূচি পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য পৌনে ২ কোটি লিটার ভোজ্যতেল, ১৯ হাজার টন মসুর ডাল, ১৪ হাজার টন চিনি ও ১০ হাজার টন ছোলা কেনার প্রস্তাব সম্প্রতি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়।

জানা যায়, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচি পরিচালনা করতে প্রয়োজন হবে ২ কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ৪০ হাজার টন চিনি, ৪০ হাজার টন মসুর ডাল, ৪০ হাজার টন ছোলা এবং ২৫ হাজার টন পেঁয়াজ।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, আগে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিসিবির পণ্য যেত না। এবার ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হবে। রোজায় যাতে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে, এজন্য আগেই এটা শুরু হচ্ছে। ঢাকায় কার্ড দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আগের মতোই ট্রাকে করে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা শহরে মোট ১৮৫টি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রতিটি ট্রাকে থাকছে চার ধরনের ২ হাজার ৫০০ কেজি পণ্য। ঢাকা শহরে ১২ লাখ পরিবারকে এই পণ্য দেওয়া হচ্ছে।

এবার শুধু কার্ডধারীরা পণ্য পাবেন। ক্রেতার ওই কার্ডে ডিলার লিখে দেবে ‘আমি পণ্য বুঝিয়ে দিলাম’। ক্রেতা টিসিবির ডিলারের কার্ডে লিখে দেবেন, ‘আমি পণ্য বুঝিয়া পাইলাম’।

এদিকে গত শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে টিসিবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রকৃত প্রাপকরা যেন টিসিবির এসব পণ্য পান, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশের নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবির ট্রাকসেল অব্যাহত থাকবে। রমজান সংযমের মাস। সবাইকে সংযম প্রদর্শন করতে হবে। সবাই যদি একসঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় না করেন, তা হলে কোনো সমস্যা হবে না। দেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিত্যপণ্য মজুদ রয়েছে, সংকটের আশঙ্কা নেই। এসব পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, দেশের মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করেছেন। আগামীতে বছরব্যাপী ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রির পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দলের পক্ষ থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ ব্যর্থতার দায়ে পদত্যাগ করবেন কিনা এমন প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রাজিলের তেলের দাম বাড়ার কারণে যদি আমাকে পদত্যাগ করতে হয় তা হলে সমস্যা নেই।’

যেভাবে দেওয়া হচ্ছে ফ্যামিলি কার্ড 

করোনা মহামারীর সময় বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে নগদ সহায়তা প্রদানের যে তালিকা করা হয়েছিল, তার মধ্যে থেকে ৩০ লাখ এবং সারাদেশে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ৫৭ লাখ ১০ হাজার পরিবারে ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এর বাইরে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ১২ লাখ এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনে ৯০ হাজার উপকারভোগী রয়েছেন। যাদের মধ্যে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করা হবে। এ জন্য উপকারভোগী নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনসংখ্যা, দারিদ্র্যের সূচক বিবেচনা করা হয়েছে। পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।

কার্ডধারী পাবেন দুই দফা পণ্য 

প্রতিটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে একসঙ্গে পাঁচ পণ্যের প্যাকেট পাবেন কার্ডধারীরা। আজ রবিবার হতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম পর্বে ১ কোটি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে ১১০ টাকা লিটারে ২ লিটার সয়াবিন তেল, ৫৫ টাকা কেজিতে ২ কেজি চিনি ও ৬৫ টাকা কেজিতে ২ কেজি মসুর ডাল। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩ এপ্রিল থেকে তিনটি পণ্যের সঙ্গে ৫০ টাকা কেজিতে ২ কেজি ছোলা যুক্ত হবে।

তদারকি করবেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসন

মানবিক এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসন সম্পৃক্ত থাকবে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি জেলায় খাদ্য অধিদপ্তর বিএডিসি ও নির্ধারিত গুদামে পণ্য সংরক্ষণ ও প্যাক করছে। টিসিবির পণ্যগুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের লক্ষ্যে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/সমপর্যায়ের কর্মকর্তাকে ‘অথরাইজড অফিসার’ নিয়োগ করেছে এবং কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী পদায়ন করা হয়েছে। কার্যক্রম তদারকির জন্য ট্যাগ অফিসার নিয়োগসহ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কমিটি গঠন করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে টিসিবির পণ্য বিতরণের জন্য সরকার তিনটি পরিপত্র জারি করেছে। পরিপত্রে টিসিবির উপকারভোগী বাছাই, পণ্য বিক্রি কার্যক্রম মনিটরিং, কমিটি গঠনসহ এ বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনা ও কৌশল বাস্তবায়নে বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট করা হয়। নিম্নআয়ের এক কোটি পরিবারের মধ্যে টিসিবির পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সার্বক্ষণিক তদারকি করবে। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কাজের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।

ঢাকায় যেভাবে টিসিবি পণ্য বিক্রি করবে

ঢাকায় অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছে। তাই কার্ড দেওয়া যাচ্ছে না। আগের মতোই ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে মোট ১৫০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। অন্যদিকে রোজার আগে ও মাঝামাঝি অবস্থায় ঢাকায় ছোলা ও খেজুর দেওয়া হলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শুধু ছোলা দেওয়া হবে। শুধু ঢাকায় রোজার ১০ দিন পর্যন্ত খেজুর বিক্রি করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com