বরগুনার তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কাওছার হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে। আদালতের আদেশ অমান্য করে অন্যের জমিতে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের অভিযোগে এ মামলা হয়।
গত বৃহস্পতিবার আমতলী সহকারী জজ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন বদলুর আলম বাবুল নামে এক ব্যক্তি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাভোকেট মো. আতিকুল হক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন ছাড়াও সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো, সার্ভেয়ার ও বড় বড়বগী ইউনিয়নের তহসিলদারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। তালতলীতে সহকারী কমিশনার না থাকায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
জানা যায়, উপজেলা বড় বগি মৌজার ৩৯৯৩ ও ৪০০০ দাগের ৪ একর কৃষি জমি ১৯৬৪-৬৫ সালে মৌলবী লতিফ ও সাদামুদ্দিনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয় সরকার। পরে ১৯৮১ সালে ওই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও রেকর্ডি জমি থেকে বদলুর আলম বাবুলসহ কয়েকজনের কাছে ২ একর ৬৭ শতাংশ বিক্রি করেন তারা। সেই সাথে প্রায় ৪১ বছর ভোগ দখল করে আসছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই জমিতে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করেন। কোনো প্রকার নোটিশ ও উচ্ছেদের কাগজপত্র ছাড়াই প্রথমে রেকর্ডি সম্পত্তি দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করা হয়।
পরে গত ২৫ জানুয়ারি আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন বদলুর আমল বাবুল গং। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার জন্য ওই ৫ জনকে বলেন।
আদালতের লিখিত নোটিশ অন্য তিনজন গ্রহণ করলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার গ্রহণ করেননি। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওই জমি দখল নিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য ভরাট করেন। বিষয়টি বাদীপক্ষ আদালতকে জানান। আদালত ওই জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন এবং বলেন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জমিতে কোনো প্রকার কাজ করা যাবে না। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ শুরু করেন।
গত ৪ মার্চ আমতলী সহকারী জজ আদালতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন ছাড়াও সহকারী কমিশনার ভূমি, উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো, সার্ভেয়ার ও তহসিলদারে বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
মামলার বাদী বদলুর আলম বাবুল বলেন, ‘আমাদের রেকর্ডি সম্পত্তি ও সরকারি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিতে ইউএনও কোনো প্রকার নোটিশ ছাড়াই দখল নিয়েছেন। এরপরে আশ্রায়ন প্রকল্প ঘর নির্মাণ শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা করি। আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিলেও তিনি সেই আদেশ মানেননি। এ জন্য তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেছি।’
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আতিকুল হক বলেন, ইউএনওর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়েছেন। কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না জানতে চেয়ে নোটিশ করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওছার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
Leave a Reply