1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

ব্যাংকে টাকার সঙ্কট বাড়ছে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২

আমানতের প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় টাকার সঙ্কট বাড়ছে ব্যাংকিং খাতে। জরুরি প্রয়োজনে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিতে (আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার বা কলমানি মার্কেট) ব্যাংকগুলোকে এক বছর আগেও যেখানে প্রতি একশত টাকায় দেড় টাকা ব্যয় করতে হতো, সেখানে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৩৪ পয়সা। আমানতের পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সামনে এ পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। এ কারণে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলোকে আবারো নগদ টাকা সরবরাহের ব্যাপারে পর্যালোচনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সাথে কলমানি মার্কেটে তদারকি বাড়াতে লেনদেন আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে কলমানি লেনদেন ইলেকট্রনিকস পদ্ধতিতে করার সময়সীমা এক মাস বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগে কোনো ব্যাংকের টাকার সঙ্কট দেখা দিলে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করে টাকা ধার নিতো, যা আন্তঃব্যাংক লেনদেন বা কলমানি মার্কেট বলা হয়। বেশি ব্যাংকের টাকার সঙ্কট হলে অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিতে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে বেশি সুদ গুনতে হয়। আর টাকার চাহিদা কম থাকলে কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিতে কম সুদ দিতে হয়। এতে অনেক সময় মনোপলির মাধ্যমে সুদহার বাড়িয়ে দিতো। আবার ব্যাংকগুলোর কলমানি মার্কেটের লেনদেনের তথ্য সিডিতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠাত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফটওয়ারে সংযুক্ত করত। এভাবে কলমানি মার্কেটে তদারকি করত কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কলমানি মার্কেটের লেনদেনের ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করতে ইডিএস (ইলেকট্রনিকস ডিলিং সিস্টেম) প্রবর্তন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারের মতো লেনদেন করতে পারবে। যে ব্যাংকের টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে ওই ব্যাংক কলমানি মার্কেটে ধার দেয়ার জন্য তাদের তথ্য সফটওয়্যারে দেবে। আবার টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলো কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিতে নির্ধারিত সফটওয়্যারে গিয়ে লেনদেন করতে পারবে। এ সফটওয়ারের সংযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছেও থাকবে। ফলে লেনদেনের তথ্য পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আর ব্যাংকগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। এ ইডিএস পদ্ধতিতে সংযুক্ত হতে ব্যাংকগুলোকে দুই মাস সময় দেয়া হয়েছিল, যা গতকাল শেষ হয়েছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে কিছু ব্যাংক এখনো নিজেদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারেনি। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে আরো এক মাসের সময় দেয়া হয়েছে। গতকাল এ সংক্রান্ত নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে।

এ দিকে কলমানি মার্কেটে টাকার চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে কলমানি মার্কেটে সুদহারও বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারিতে কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিতে সুদহার ছিল ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত ৩০ জুন তা আরো বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত ৩১ জানুয়ারিতে এসে তা আরো বেড়ে হয় ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারিতে এসে কলমানি মার্কেটে সুদহার এক লাফে বেড়ে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশে উঠেছে।

কলমানি মার্কেটে এ সুদহার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমানতের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। গত জুলাই থেকে কমতে শুরু করেছে, যা আজো অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা না বেড়ে বরং কমে হয়েছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ৪৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে আমানত কমেছে প্রায় ৯৮ শতাংশ। এক দিকে আমানতের পরিমাণ কমে গেছে। অপর দিকে ব্যাংকের টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। এ সময়ে পণ্য আমদানিতে ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। কিন্তু রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর ডলারের সঙ্কট দেখা দেয়। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো ডলার কিনেছে প্রায় ৩২৮ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এক দিকে, আমানতের পরিমাণ কমে গেছে, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ টাকায় ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়ে কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিতে হচ্ছে। এ কারণেই কলমানি মার্কেটে সুদহার বেড়ে গেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমানতের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ও আমদানির চাপ না কমলে সামনে ব্যাংকগুলোর টাকার সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশেষ করে রেপো (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার পদ্ধতি) ও বিশেষ তারল্য সহায়তা বাড়াতে হবে। অন্যথায় কলমানি মার্কেটে সুদহার আরো বেড়ে যাবে। মুদ্রাবাজার আরো অস্থিতিশীল হবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com