নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাবিত নামের তালিকা সংক্ষিপ্ত করেছে সার্চ কমিটি। রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন মহল থেকে প্রাপ্ত ৩২২ জনের নামের তালিকা নিয়ে গতকাল বিকেলে বসেছিল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটি। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকে তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আগামী শনিবার এ তালিকা চূড়ান্ত করতে ফের বৈঠকে বসবেন কমিটির সদস্যরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্চ কমিটির একজন সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, তালিকা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। আমরা এটা নিয়ে আবার বসব।
বৈঠক শেষে সার্চ কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করা মন্ত্রিপরিষদের বিভাগের সচিব (সমন্বয়ক ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, আজকে অনুসন্ধান কমিটি বসেছিল। তাদের অনুসন্ধান অব্যাহত আছে এবং আগামী শনিবার বেলা ১১টায় আবার বসবেন। আর কোনো বিষয় আমি বলতে পারব না।
বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনানুগভাবে যে যোগ্যতার কথা বলা আছে সে অনুযায়ীই হবে। প্রস্তাবিত নামের মধ্যে যারা নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি এ কর্মকর্তা।
সূত্র জানিয়েছে, ৩২২ জনের তালিকা থেকে আড়াই শতাধিক নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এদিকে সার্চ কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
গতকাল রাতে তিনি আমাদের সময়কে বলেন, কোন দল কার নাম প্রস্তাব করেছে, সেটা প্রকাশ করা উচিত। সর্বশেষ কমিশন গঠনের সময় ক্ষমতাসীন দল চারটি নাম ঢুকিয়েছে, সেভাবেই কমিশন গঠন করা হয়েছে। তখনকার সার্চ কমিটি তেমন কোনো কাজ করেনি। এবারও সেই সম্ভাবনা আছে।
তিনি আরও বলেন, অর্ধেক জিনিস প্রকাশ করে তো স্বচ্ছতা হয় না। পূর্ণভাবে প্রকাশ করা উচিত। এগুলো রাজনৈতিক দলের সম্পদ না। এসব তথ্য এখন মন্ত্রিপরিষদের সম্পদ। সুতারাং এটা প্রকাশ তরা উচিত।
নিরপেক্ষ ইসি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অন্য দেশে সবার মতামত নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আমাদের দেশে সেটা হয় না। নিরপেক্ষ ইসিও কাজ করতে পারবে না যদি নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ না হয়।
প্রক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসি গঠনের আইনটি ত্রুটিপূর্ণ। কোন ক্রাইটেরিয়ায় তারা নিরপেক্ষ যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করবে সেটা স্পষ্ট নয়। প্রায় একই প্রক্রিয়ায় এর আগে ইসি গঠন করা হয়েছে। আমাদের অতীতের ইতিহাস সুখকর নয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বাছাইয়ের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন কমিটির প্রধান ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এতে অংশ নেন কমিটির সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটি ইতোমধ্যে বিশিষ্টজন, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সঙ্গে তিন দিনে চার দফা বৈঠক করেছেন। এরই মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তিপর্যায় থেকে নাম প্রস্তাবের আহ্বান জানায় সার্চ কমিটি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রাপ্ত মোট ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপিসহ নাম না দেওয়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার আগ পর্যন্ত সার্চ কমিটির কাছে নামের প্রস্তাব করতে পারবে। এর মধ্যে প্রাপ্ত নামের তালিকা নিয়ে কাটছাঁট করতে বসেছে সার্চ কমিটি।
আইন অনুযায়ী, ইসি গঠনে নামের সুপারিশ চূড়ান্তের জন্য সার্চ কমিটির জন্য সময় ১৫ দিন, সেই অনুযায়ী তাদের হাতে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে। এরই মধ্যে সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য ২ জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এ ১০ জনের মধ্য থেকে সিইসিসহ ৫ জনকে নিয়ে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি।
Leave a Reply