আজ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন, ২৯ তারিখ। এমনিতে ফেব্রুয়ারি মাস হয় ২৮ দিনের, কিন্তু প্রতি চার বছর পর খ্রিস্টীয় বৎসর এক দিন বেড়ে গিয়ে ৩৬৫ দিনে বছর না হয়ে ৩৬৬ দিনে বছর গণনা করা হয়। আর সেই অতিরিক্ত দিনটি যুক্ত হয় হ্রস্বতম মাস (২৮ দিন) ফেব্রুয়ারির সঙ্গে। সেই এক দিন বেড়ে যাওয়া বছরটিকে ইংরেজিতে বলে ‘লিপ ইয়ার’। বাংলায় অধিবর্ষ। বাংলা শব্দটি খুব একটা পরিচিত না। সে যাই হোক। এবার ‘লিপ ইয়ার’ বা অধিবর্ষের কারণে ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। অর্থাৎ এবার ফেব্রুয়ারি মাসে একটা দিন বেশি পাওয়া গেছে। বলা যেতে পারে ‘ফাউ’। সেই ‘ফাউ’ দিনটি আজ। কাল শুরু হবে মার্চ মাস। কেউ আবার বেমক্কা প্রশ্ন করে বসবেন না, আজ বা আগামীকাল বাংলা কোন মাস বা কত তারিখ। এরূপ প্রশ্নে বেশির ভাগ শহুরে বাঙালির ‘অপমান নষ্ট’ হবে।
খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জির কয়েকটি মাস—ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আরো দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসও আছে। তবে ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ, মার্চের ২৫ ও ২৬ তারিখ ও ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ আমাদের চেতনার সঙ্গে, অস্তিত্বের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। বাঙালির সবচেয়ে বড় গৌরবের ধন যে মাতৃভাষা বাংলা, যার জন্য আমরা বুকের রক্ত দিয়েছি, ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত যে স্বাধীনতা, এগুলোর জন্য আমাদের যে আত্মত্যাগ ও অর্জন তার ইতিহাস সূচিত হয়েছে, রচিত হয়েছে খ্রিস্টীয় বর্ষপঞ্জির ওই দিনগুলিতে। আমরা তাই ওই দিনগুলি পালন করি আমাদের হূদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে।
অন্যান্যবারের মতো এবারও সারাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারি মহান ভাষা দিবস, যা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস—পালিত হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে। কোথাও কোনো গোলযোগের সংবাদ পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে এখন চলছে আধিপত্যবাদের যুগ। যেকোনো পায়-পরবে, উৎসব-আয়োজনে শক্তি প্রদর্শন ও দখলদারি যেন নিয়মে দাঁড়িয়েছে। কয়েক বছর আগেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মধ্যরাতে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই আমরা দেখেছি। সুখের বিষয়, এটা আজকাল আর হচ্ছে না—পুরো অনুষ্ঠানটি কর্তৃপক্ষীয় তৎপরতায় একটি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে। তবু কোথাও কোনো সিঁদুরে মেঘও যেন না দেখা যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। সেই সঙ্গে শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসের মতো অনুষ্ঠানে যেন সর্বজনীনতা বজায় থাকে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মাতৃভাষা, মুক্তিযুদ্ধ বা বিজয় দিবস দলমত-নির্বিশেষে আমাদের সকলের, এর মালিকানা বিশেষ কোনো জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠী বা দলের নয়। এগুলো হচ্ছে সেই মহান উপাদান, যা অসংখ্য বিভক্তি-বিভাজনের মধ্যেও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখবে। আর জাতি যদি ঐক্যবদ্ধই না থাকে তবে তার সকল অর্জন-উন্নয়ন একদিন তাসের ঘরের মতো ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। তখন যেকোনো আপদে-বিপদে, বিশেষ করে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর, খোদা না খাস্তা, হামলা হলে, এই জাতি একাত্তরের মতো ইস্পাতকঠিন একতা-দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
২.
অন্তরে যাই থাকুক না কেন, শুধু একুশ তারিখেই নয়, সারা ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আমরা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির জন্য সভা-সমিতি-সেমিনার-মিটিং-মিছিলে বায়ান্নর আবেগ-উত্তেজনা নিয়ে গলাবাজি করতে করতে শুধু নিজেরা শহীদ হতে বাকি রাখি। আর সেজন্য আমাদের বেশভূষা কথাবার্তাতেও বাঙালিয়ানা আনার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকি। যদিও আবেগে-উত্তেজনায় মুখ ফস্কে কখনো কোনো সেমিনারে হয়তো টেবিল চাপড়ে বলে ফেলি : সর্বস্তরে বাংলা চালু করতে হবে। ইট মাস্ট বি ডান রাইট নাউ। নো কম্প্রোমাইজ। সেই জ্বালাময়ী ভাষণ শুনে হাজিরানে মজলিস দন্ত বিকশিত করে হাততালি দেয়। আর বক্তার ধারণা হয়, পাবলিক তাঁর বক্তব্য খুব মজাসে গিলেছে।
আসলে সমগ্র চেতনাজুড়ে যেখানে সাহেবিয়ানা, যেখানে বাঙালিয়ানার ব-ও অনুপস্থিত, সেখানে এটাই তো হওয়ার কথা। আমরা ফেব্রুয়ারি মাস এলেই বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হয়ে যেতে চাই, পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কে পান্তা ভাত-শুঁটকি ভর্তা খেয়ে গাড়িতে রবীন্দ্রসংগীত বাজাতে বাজাতে হাজির হই পাঁচতারা হোটেলে হিমশীতল বিয়ারের খোঁজে, রাতে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ উদ্যাপন করি একগাদা নারী-পুরুষের লৎকা-লিক ও উদ্বাহু নৃত্যের তালে তালে। আমাদের সন্তানেরা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে বিদেশী ভাষা ও কায়দা-কানুন শিখে যথাসময়ে যখন পাড়ি দেয় ইউরোপ-আমেরিকা-কানাডা-অস্ট্রেলিয়ায় তখন গর্বে আমাদের বুক ফুলে ওঠে। অন্যথায় আমাদের আফসোসের সীমা থাকে না। ‘অমুকের পোলা কী সুন্দর মুখে খই ফোটানোর মতোন ইংরেজি কয়, কী ইস্মার্ট পোলাটা। হের বাপে কইছে লেহাপড়া কইরা হে বিদেশেই থাইক্যা যাইব। আর তুই? তুই বিদেশের কুনো এনিভার্সিটিতেই যাইতে পারলি না। ক্যান? আমার কি অমুকের তন ট্যাহা-পয়সা কম নাহি? না লোকে আমারে কম সালাম দ্যায়?’ ছেলে ইংরেজি বলতে না পারলে, বিদেশে যেতে না পারলে, এমনি ক্ষোভে ফুঁসতে থাকি আমরা। অথচ নিজে অথবা ছেলে যে বাংলা ভাষায় ‘সুপণ্ডিত,’ শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে বা লিখতে যে আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে, তাতে কোনো খেদ নেই।
বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের অবজ্ঞা অবহেলা নতুন কিছু নয়। সেই ইংরেজ আমলে (১৭৫৭-১৯৪৭) ইংরেজি জানাটা জরুরি ছিল শাসক ইংরেজদের সঙ্গে উঠাবসার জন্য, তাদের সুনজরে থাকার জন্য, চাকরিবাকরি পাওয়ার জন্য। তখন চিঠিটা লেখার মতো, দলিলটা পড়ার মতো বাংলা জানলেই চলত। ইংরেজরা চলে যাওয়ার পরও ইংরেজি ভাষা ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির ভূত আমাদের কাঁধ থেকে নামেনি। পাকিস্তানি আমলে (১৯৪৭-১৯৭১) ২৪ বছর যেসব জোড়াতালি দিয়ে পাকিস্তান নামক দেশটি চালানোর চেষ্টা ছিল শাসককুলের, ইংরেজি ছিল তার অন্যতম উপাদান। জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নাকি বলেছিলেন : ‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একমাত্র যোগসূত্র ইংরেজি ভাষা, পিআইএ (পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স) ও আমি’। স্বাধীনতার পর এই যোগসূত্র যখন ছিন্ন হয়ে গেল তখন শুরু থেকেই যথারীতি বাংলা ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে সর্বস্তরে তা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলো। এর সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সে বিতর্কে না গিয়ে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা-অমনোযোগিতা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে দুই পাশের দোকানপাটের সাইনবোর্ড, টিভির পর্দায় বাংলা বানানের দৃষ্টিকটু ভুল-ভ্রান্তি, এমনকি স্বাধীনতা পদক—একুশে পদকের মতো সর্বোচ্চ জাতীয় পদকে বানান ভুল এটাই প্রমাণ করে যে বাংলা বানানের বেলায় ‘একটা হলেই হলো’ মনোভাব এখন ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। (প্রসঙ্গক্রমে, পদকে বানানের ভুল কি এবারের পদকপ্রাপ্তদের সকলে ধরতে পেরেছেন? বিশেষ করে এই অতি গৌরবের রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত কবি-সাহিত্যিকরা? দুষ্ট শিষ্ট সব লোকে বলে, বোধ হয় না!) এর একটা প্রধান কারণ, বাংলা বানান প্রমিতকরণের উদ্যোগটি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে বাংলা একাডেমি সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে বলা যাবে না। বিষয়টিকে বোধ হয় একটি জ্ঞানজাগতিক ও কেতাবি ব্যাপার মনে করে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব কেবলমাত্র একটি ‘আধুনিক’ অভিধান প্রণয়ন ও প্রকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছেন; সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনার জগতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেননি। সাধারণ মানুষ কয়জন বাংলা অভিধান কেনেন বা ব্যবহার করেন? অবশ্য এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির চেয়ে সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশি। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে শুদ্ধ বাংলা বানান শিক্ষাদানের ব্যবস্থা কি যথেষ্ট? বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে, যেখানে ভাষা ও গণিতের বুনিয়াদ তৈরি হয়। আর এই স্তরে সর্বপ্রথম আসে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বানান জ্ঞানের কথা। এই স্পর্শকাতর অথচ খুবই প্রাসঙ্গিক ও ততোধিক জরুরি বিষয়টির আপাতত শুধু উল্লেখই করলাম কোনো অপ্রীতিকর বিতর্কে না গিয়ে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে কিছু সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। নইলে সাইনবোর্ডেই বলুন আর টেলিভিশনের পর্দায়ই বলুন বানান নিয়ে এই অরাজকতা চলতেই থাকবে।
এই সেদিনও সূর্য য-ফলা ছাড়া পূর্ব দিকে উদিত হতো না, পাখি দীর্ঘ ঈ-কার ছাড়া আকাশে উড়ত না, বাড়ি ঈ-কার ছাড়া বানানো যেত না! এগুলো স্বাধীনতার আগের কথা বলছি। চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে এসব ঈকার-ন-ণ-য ফলা-শ-স-ষ ইত্যাদির জন্য আমাদের শৈশবে কম বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয়নি। কিন্তু শ্রদ্ধেয় জান্নাতবাসী/স্বর্গবাসী গুরুগণ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বা মদনমোহন তর্কালঙ্কার থেকে একচুলও সরে আসতে নারাজ ছিলেন। তারপর এক সাগর রক্ত পেরিয়ে এসে আমাদের ভাষাবিদগণের উপলব্ধি হলো এসব ণত্ববিধান-ষত্ববিধানের জন্য কোমলমতি শিশুরা মিছেমিছি মার খাচ্ছে। তাঁরা সংগত কারণেই ভাষাকে বাহুল্যবর্জিত করার, আমি বলব, শুভ উদ্যোগ নিলেন। ফলে দীর্ঘ ঈ-কারের ভারমুক্ত হয়ে পাখি কলরব করতে করতে আকাশে ডানা মেলল আর আমরাও নিঃশঙ্কচিত্তে দীর্ঘ ঈ-কারবিহীন ছিমছাম বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করলাম! এমনি করে বানানের প্রমিতকরণ ও এক ধরনের সহজীকরণ করা হলো। কিন্তু সেটা সবাইকে জানতে হবে তো। সেই জানানোর কাজটি গুরুত্বসহকারে আজও হয়নি। আর হয়নি বলেই কারো কারো গোঁয়ারতুমি মার্কা উচ্চারণ : আজকাল হ্রস্ব ই-কার, দীর্ঘ ঈ-কার দুটোই চলে, একটা হলেই হলো।
৩.
আর মুখের ভাষা বাংলা, প্রাণের ভাষা বাংলার ওপর আগ্রাসনটা বেশি হচ্ছে আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ওপর কিছু কিছু অপসংস্কৃতির অপচ্ছায়া থেকে। আর এখানে এক নম্বর আসামি, আমার মতে, আকাশ-সংস্কৃতি। আমরা নব্বইয়ের দশকে যেই আমাদের আকাশ-সংস্কৃতির দরজা-জানালা খুলে দিলাম অমনি আমাদের নিভৃত পল্লীর ছেলেটি-মেয়েটি থেকে শুরু করে শহরের সেই তথাকথিত ‘ইস্মার্ট’ ছেলেমেয়েরা বাঘের রক্তের স্বাদ পাওয়ার মতো বিদেশী অপসংস্কৃতির আস্বাদ পেতে শুরু করল। আর সেটা যে শুধু…সুড়সুড়ি ও দেহপ্রদর্শনীমূলক সিনেমার (বলা উচিত ‘ছিঃনেমা’) মাধ্যমে হচ্ছে তা নয়, পণ্যের চেয়ে নারীদেহকে উপস্থাপন করার প্রবণতাসমৃদ্ধ বিজ্ঞাপনচিত্র ঘণ্টায় কম করে হলেও বিশবার দেখিয়ে দেখিয়ে দর্শককে মতিচ্ছন্ন করে ফেলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভাষায় বিরক্তিকর পরিবর্তন। আশির দশকে, এমনকি নব্বইয়ের দশকেও বিটিভির উপস্থাপক-উপস্থাপিকারা দর্শকদের সম্বোধন করতেন ‘দর্শকমণ্ডলি’ বা ‘দর্শকবৃন্দ’ বলে। তাঁরা এখনো ওইরূপ সম্বোধন করে তাঁদের কৌলীন্য বজায় রেখেছেন। অথচ অন্যান্য চ্যানেলের তাঁদের কিছু কিছু ‘ইস্মার্ট’, অনুকরণসর্বস্ব সহকর্মী দর্শকমণ্ডলি বা দর্শকবৃন্দ বলতে যেন লজ্জা পান; তাঁরা বলেন ‘ভিউয়ার্স’। বলেই আবার কথাবার্তা চালিয়ে যান বাংলায়। একটা ওয়াশিং পাউডারের বিজ্ঞাপনে দেখা যায় এক নবীনা গৃহিণী তাঁর স্বামীর জামায় আকস্মিকভাবে কিসের ঝোল পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার দিয়ে বলছেন: ‘ও শিট্’। স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে এসব নোংরা উচ্চারণও আমাদের শুনতে হচ্ছে, শিখতে হচ্ছে, যা আমাদের শতকরা নব্বইজন গৃহিণীও জানেন না বা জানার কোনো আগ্রহও নেই তাঁদের। দুঃখ হয়, এসব কিছুতে লাগাম দেওয়ার জন্য দেশে শত শত কর্তাব্যক্তি জনগণের পয়সায় পালিত হচ্ছেন। তার পরও অবারিতভাবে চলছে এসব অনাচার। মাঝে মাঝে মনে হয়, হয়তো এমন কোনো ব্যবস্থা আছে, যাতে ওই কর্তাব্যক্তিদের টিভির পর্দায় এসব আপত্তিকর শব্দ বা দৃশ্য শোনানো বা দেখানোর আগেই ‘ডিলিট’ হয়ে যায়, তাই তাঁরা দেখতে পান না।
ফেব্রুয়ারিকে বিদায়, থুকিক, গুডবাই ও মার্চকে স্বাগত নয়, ওয়েলকাম জানানোর আগে নিবন্ধটি শেষ করি আজ থেকে ৩২ বছর আগে (১৬.০২.৮৮) আমার নিজের লেখা ‘একুশের পালা’ শীর্ষক কবিতার শেষ স্তবক উদ্ধৃত করে: ফেব্রুয়ারি আসে আর ফেব্রুয়ারি যায়/ দিয়ে যায় কাশ্মীরি শালে ঢাকা দেশপ্রেম ঠিকা,/ কিছু লোক পথ খুঁজে অন্ধকার দেয়ালের গায়/ রাত জেগে মেরে মেরে শাদা কালো হরফের ‘চিকা’।
লেখক : সাবেক সচিব, কবি
Leave a Reply