লাইভে এসে ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান আত্মহত্যা করবেন, বিষয়টি ফেসবুক বুঝতে পারে মাথায় গুলি করার আড়াই মিনিট আগেই। তবে লাইভের শুরুতে মহসিনের কথা স্বাভাবিক ছিল।
তিনি আত্মহত্যা করবেন, এমনটা প্রথমে মনে হয়নি বলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) জানিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। মালিবাগ কার্যালয়ে গতকাল বুধবার আত্মহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক এক সেমিনারে মহসিনের প্রসঙ্গে এ কথা জানান সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মাহবুবুর রহমান।
পুলিশ জানিয়েছে, জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ চালুর পর থেকে চার বছরে ফোনে সাড়া দিয়ে ১ হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। একই সময়ে ফোনে সাড়া দিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছে ১ হাজার ১৩৫টি।
চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর ৫৮ বছর বয়সী আবু মহসিন খান পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। থাকতেন ধানমন্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর ভবনে নিজের ফ্ল্যাটে। গেল ২ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে ওই বাসা থেকেই ফেসবুক লাইভে এসে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন। মহসিন ফেসবুক লাইভে ছিলেন সাড়ে ১৬ মিনিটের বেশি।
এ বিষয়ে ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে সিআইডি প্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুক আমাদের জানাল, লাইভের প্রথমে মহসিনের কথা স্বাভাবিক ছিল। তিনি আত্মহত্যা করবেন, এমনটা তাদের মনে হয়নি। প্রথমে মহসিন ফ্যামিলি লাইফ, পারসোনাল লাইফ, ব্যবসায়িক লাইফ নিয়ে কথা বলছিলেন। এ কারণে ফেসবুক আত্মহত্যার বিষয়টি বুঝতে পারেনি। লাইভের শেষের আড়াই মিনিট আগে ফেসবুক বুঝতে পারে, মহসিন আত্মহত্যা করবেন। তাই ফেসবুককে অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে তারা আত্মহত্যা রোধে আমাদের সঙ্গে কাজ করে।’
সিআইডি আত্মহত্যা রোধে কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মহসিন যখন লাইভ শুরু করেছিলেন, তখন কারা কারা লাইভ দেখছিলেন, আমরা সাইবার পুলিশ থেকে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। এর উদ্দেশ্য কাউকে দোষারোপ নয়, তাদের সচেতন করা। যাতে ভবিষ্যতে তারা সচেতন হয়ে আমাদের জানাতে পারেন।’
সেমিনারে ৯৯৯-এর অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ বলেন, ‘২০১৭ সালে চালু হওয়া জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বর্তমানে প্রায় ৫০০ জনবল নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৯৯-এ প্রায় সাড়ে তিন কোটি কল এসেছে। তবে ১ কোটি ১৫ লাখ ফোন কলের সেবা দেওয়া হয়েছে, যা মোট কলের ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৮ ভাগ পুলিশি সেবা, ৯ ভাগ ফায়ার সার্ভিস এবং ১১ ভাগ অ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত।’
অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ বলেন, ‘৯৯৯-এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যা নিয়ে ফোন কল এসেছে, যা আমরা প্রতিরোধ করতে পেরেছি। তবে কয়েকজন চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। এর বাইরে আত্মহত্যার ফোন পেয়ে ১ হাজার ১৩৫টি আত্মহত্যাজনিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৯৯৯-এ অটো কলার লোকেশন না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কলারের লোকেশন আমরা যত দ্রুত পেয়ে যাব, তত দ্রুত যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে। অটো কলার লোকেশন যুক্ত করতে অবশ্য কাজ চলছে।’
Leave a Reply