বরিশালের বাবুগঞ্জের মো. সাইদুল হক খলিফা। জন্ম ১৯৪১ সালের ১ জানুয়ারি। শিক্ষাগত যোগ্যতা তৃতীয় শ্রেণি পাস। ২০০৭ সালে এমন তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন খলিফা। জাতীয় পরিচয়পত্রও সংগ্রহ করেছেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি বয়স ২৭ বছর কমিয়ে ফের ভোটার হয়েছেন। এবার দুই যুগের বেশি সময়ে তিনি আরও দুই ক্লাস অর্থাৎ পঞ্চম শ্রেণি ‘পাস’ করেছেন। এমন তথ্য দিয়ে খলিফা দ্বিতীয়বার ভোটার হলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) শতকোটি টাকা দিয়ে কেনা অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম বিষয়টি শনাক্ত করে আটকাতে পারেনি। জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভারের তথ্যানুযায়ী, দ্বিতীয়বার ভোটার হয়ে আরেকটি এনআইডি কার্ডও সংগ্রহ করেছেন খলিফা। অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এমনটি হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার আশরাফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, একবার ভোটার হলে তার ফিঙ্গার প্রিন্ট আমাদের সার্ভারে সেভ (সংরক্ষণ) করে রেখে দেওয়া হয়। ফের ভোটার হতে গেলে সার্ভার সেটি শনাক্ত করে এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট আর নেয় না। আমাদের সিস্টেম সেটি ধরতে পারে। তা হলে সাইদুল হক খলিফা দ্বিতীয়বার ভোটার কীভাবে হলেন জানতে চাইলে আশরাফ হোসেন বলেন, কেউ ভোটার হতে গেলে উনার ফিঙ্গার প্রিন্ট আমাদের কর্মকর্তার সামনেই নেওয়া হয়। সেখানে কোনো ফাঁকফোকর থাকলে সেটি তো সিস্টেম ধরতে পারবে না।
ইসি সূত্র জানায়, খলিফা ২০১৬ সালে জন্মসনদ ও হলফনামা দিয়ে বয়স ২৭ বছর কমাতে এনআইডি সংশোধনের আবেদন করেন। এ আবেদন নাকচ হওয়ার দুই বছর পর দ্বিতীয়বার নতুন করে ভোটার হন তিনি। আগের এনআইডিতে থাকা প্রায় সব তথ্যই এক। শিক্ষাগত যোগ্যতা আগের তৃতীয় শ্রেণির জায়গায় পঞ্চম শ্রেণি উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মা-বাবার নামের আগে মৃত যোগ করা হয়। আর বয়স ১ জানুয়ারি ১৯৪১-এর জায়গায় ১ জানুয়ারি ১৯৬৮ উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসি কমর্কতারা জানান, একই ব্যক্তির দুবার ভোটার হওয়ার বিধান নেই। এমনটি রোধে শতকোটি টাকা মূল্যে কেনা অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (এএফআইএস) সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এতে একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার ভোটার হতে গেলে তার আঙুলের ছাপ বা চোখের আইরিশে মিল ধরা পড়ে। দ্বৈত ভোটার হওয়ার দায়ে তার আইডি লক করে দেওয়া হয়। পরে প্রথম কার্ডটি সঠিক হবে এবং দ্বিতীয়টি বাতিল বলে গণ্য হবে। কিন্তু বর্তমানে খলিফার দুটি এনআইডি অ্যাকটিভ রয়েছে।
কেউ দ্বিতীয়বার ভোটার হয়ে এনআইডি কার্ড নিয়ে গেলেন অথচ এএফআইএস ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে দ্বৈত ভোটার শনাক্ত করা না যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের ধারণা, এ ক্ষেত্রে এএফআইএস সফটওয়্যার বা অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এটি রোধ করা না গেলে এমন কাজ অনেকেই করতে চাইবেন।
ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটার হলে অনধিক ছয় মাস কারাদ- বা অনধিক দুই হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবে। ২০১৮ সালে এক আদেশে দ্বৈত ভোটারের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
Leave a Reply