করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে আজ বুধবার থেকে ফের সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে শুরু হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে পৃথক বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।
রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের জন্য জারিকৃত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, করোনা সংক্রমণজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী বুধবার থেকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০’ এবং এতদসংক্রান্তে জারিকৃত প্র্যাকটিস ডাইরেকশন অনুসরণ করত: তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে হাইকোর্ট বিভাগের সব বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর আগে গতকাল সকালে আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘চারদিকে করোনার সংক্রমণের যে অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে আবারও হয়ত ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে। ভার্চুয়ালি মামলা যে কম নিষ্পত্তি হয় তা কিন্তু নয়, ভার্চুয়ালি বেশিই নিষ্পত্তি হয়।’ এ সময় আদালতে উপস্থিত রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ‘আমাদের অ্যাটর্নি জেনারেল মহোদয় এবং একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ কয়েকজন আইন
কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন।’ তখন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ’আমাদের হাইকোর্টের ১৩ জন বিচারপতি, স্টাফ এবং নিম্ন আদালতের বেশ কিছু বিচারকও আক্রান্ত হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তি জারির পর সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি ব?্যাবহার করে আদালতের কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানিয়েছি, বর্তমানে শারীরিক উপস্থিতিতে যেভাবে আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে, ভার্চুয়াল কোর্টও যেন ঠিক সেভাবেই পরিচালনা করা হয়। যেমন- আগাম জামিন শোনা, কোর্টের পূর্ণাঙ্গ কর্মঘণ্টা অব?্যাহত থাকা, ফৌজদারি মোশন বেঞ্চ বৃদ্ধি ও এফিডেভিট সেকশনে লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে।
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম একেবারেই বন্ধ ছিল। এমনই এক পরিস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম সচল রাখার প্রয়োজনীয়তার একপর্যায়ে ২০২০ সালের ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পর ৯ মে ভার্চুয়াল উপস্থিতিকে সশরীরে উপস্থিতি হিসেবে গণ্য করে অধ্যাদেশটি জারি করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর পর একই বছরের ১০ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচারিক কার্যক্রম শুরুর মাধ্যমে দেশে ভার্চুয়াল আদালত চালু হয়েছিল। করোনা সংক্রমণ কমে আসায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের উভয় (আপীল ও হাইকোর্ট) বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ফের শারীরিক উপস্থিতিতে চালু করে কোর্ট প্রশাসন।
তবে ধীরে ধীরে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ছে। দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ছয় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনাক্তের হার বেড়ে হয়েছে ২০ শতাংশের ওপরে। সর্বশেষ গত রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে করোনা সংক্রমিত ১০ জনের মৃত্যু হয়। এই সময় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ জন। এরই মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে ফের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ভার্চুয়ালি শুরু হয়েছে। এর পর আজ বুধবার থেকে সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম ভার্চুয়ালি শুরু হচ্ছে।
Leave a Reply