শীতকালে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন অনেকেই। সচেতন না হলে সেটি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। একপর্যায়ে মলত্যাগে ব্যথা এবং রক্তক্ষরণও হতে পারে।
পাইলস, ফিস্টুলা মলদ্বারের জটিল রোগ। এর কোনটির কারণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটি বুঝতে হলে লক্ষণ ও উপসর্গে দৃষ্টি দিতে হবে।
মলদ্বারের দেয়ালের পাতলা প্রথম আস্তর ফেটে বা ছিঁড়ে যখন ক্ষতের সৃষ্টি হয় সেই ক্ষতকে এনাল ফিশার বা ফিস্টুলা বলা হয়। মলত্যাগের সময় যখন শক্ত বা বড় আকারের মল পায়ুপথ দিয়ে বেরিয়ে আসে তখন ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে এনাল ফিশারের সূচনা করে।
মলত্যাগে ব্যথা এবং রক্তক্ষরণ এনাল ফিশারের প্রধান উপসর্গ। এনাল ফিশার হলে মলদ্বারে যে মাংসপেশি (এনাল/মলদ্বার স্ফিংটার) থাকে সেই পেশির ব্যথাযুক্ত সংকোচন অনুভূত হতে পারে।
সচরাচর ছোট্ট শিশুদের ফিস্টুলা হয় যদিও যেকোনো বয়সেই এনাল ফিশার হতে পারে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন গুলশানের আরএ হাসপাতালের বৃহদান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রকিবুল আনোয়ার।
ফিস্টুলা সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমেই ভালো করা সম্ভব যেমন খাবারে বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল যোগ করা, অধিক পরিমাণে পানি পান করা ইত্যাদি। কোনো ক্ষেত্রে ওষুধ বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় সার্জারির পরও ফিস্টুলা দেখা দেয়।
মলত্যাগের পরে ব্যথা কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মলের ওপর তাজা রক্ত দেখা যায় অথবা মল ত্যাগ করার পর টয়লেট পেপারে রক্ত দেখা যেতে পারে। পায়ুপথের শেষে ঘা অনুভব করা যায় এবং বেশ কিছুদিন থাকার পর এই ঘায়ের মুখের ত্বক ঘায়ের নিচে কিছুটা পর্যন্ত ফেটে গিয়ে চামড়ায় ছোট একটা পিণ্ড সৃষ্টি হয় যার নাম ‘পাইলস প্রহরী’ অর্থাৎ যেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো শতভাগ সময় ঘা-টা পাহারা দেয়।
সচরাচর শক্ত অথবা বিশাল আকারের মলত্যাগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, দীর্ঘস্থায়ী পাতলা পায়খানা, পায়ুপথকে যৌন সহবাসে ব্যবহার এবং সন্তান জন্মদানের সময় এনাল ফিশার সৃষ্টি হয়। মাঝে মধ্যে ক্রোনস অথবা অন্ত্রের অন্যান্য প্রদাহ, পায়ুপথের ক্যান্সার, এইডস, সিফিলিস এবং টিবির কারণে ফিস্টুলার সৃষ্টি হয়।
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী ফিশার সাধারণত মাংসপেশি বা স্ফিংটার পর্যন্ত বর্ধিত হয়। সার্জারি ছাড়া আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
এনাল ফিশার একবার হলে বারবার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। পায়ুপথে এনাল ফিশারের অবস্থান ফিশার হওয়ার কারণ নির্দেশনা করতে পারে। পায়ুপথের সামনে অথবা পেছন দিক না হয়ে ফিশারের পার্র্শ্বস্থানে অবস্থান সাধারণত ক্রোনস, টিবি, সিফিলিস ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।
এনাল ফিশারের চিকিৎসার জন্য পরামর্শ প্রয়োজন। চিকিৎসক রোগীর ইতিহাস জেনে সাবধানে পায়ুপথ পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভাস ও জীবনযাত্রা পরিচালনায় উপকার না হয় তবে চিকিৎসক মেডিকেল চিকিৎসা শুরু করবেন। উপসর্গ ও ফিশার ভালো না হওয়ার কারণ হচ্ছে যে, যে মুহূর্তে পায়ুপথ ছিঁড়ে যায় সে মুহূর্তে মলদ্বারের মাংসপেশির (এনাল/মলদ্বার স্ফিংটার) সেই ব্যথাযুক্ত সংকোচন হয় এবং সেই সংকোচন ব্যথার সৃষ্টি করে এবং ফিশারের ঘা শুকাতে বাধার সৃষ্টি করে। ওষুধ, স্নায়ুবিক নিয়ন্ত্রণ অথবা শল্যচিকিৎসা সবই নির্ভর করে ওই পেশিসংকচন প্রতিরোধ করার ব্যবস্থাপনার ওপর। পেশি সংকোচন বন্ধ করে পেশির শিথিলতা নিশ্চিত করতে পারলে ফিশার ভালো হওয়া শুরু করে।
পেশির শিথিলতার জন্য ব্যবহার করা হয় নাইট্রাইট জাতীয় ওষুধ যা হৃৎপিণ্ডের ব্যথা এনজাইনা রোধে ব্যবহার করা হয়। বটুলিনিয়াম টক্সিন পায়ুপথের স্নায়ুকে অবশ করে মাংসপেশি শিথিল করে এবং সার্জারির মাধ্যমে ল্যাটারাল স্ফিংটারোটোমিও একইভাবে কিন্তু স্থায়ীভাবে এনাল/মলদ্বার স্ফিংটার শিথিল করে, সে কারণে অপারেশন করলে ফিশার দ্রুত ও স্থায়ী আরোগ্য লাভ সম্ভব হয়।
Leave a Reply