নির্দলীয়- নিরপেক্ষ সরকার বিষয়ে আলোচনা চায় বিএনপি। এর বাইরে অন্য কোনো ইস্যুতে এ মুহূর্তে কোনো আলোচনায় অংশ নেবে না দলটি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপ ইস্যুতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। সংলাপে বসার আমন্ত্রণ পাওয়ার আগেই গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে গতকাল বুধবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি বিশ^াস করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকার ছাড়া সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন কমিশনই করতে পারবে না। রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছেন, তার কোনো ক্ষমতা নেই পরিবর্তন করার। এ কারণে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দলগুলোর সংলাপ কোনো ইতিবাচক ফল আনতে পারবে না। বিএনপি অর্থহীন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করবে না।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সংলাপ বিষয়ে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত নিবন্ধিত শরিক দলগুলোর মনোভাব জানার চেষ্টা করবে বিএনপি। এ জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে দলটি। অবশ্য কোনো শরিক দল সংলাপে যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হবে না। সূত্র জানায়, সংলাপে না গেলেও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেলে তার জবাব দেবে বিএনপি। সেখানে রাষ্ট্রপতিকে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ইস্যুতে আলোচনার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানানো হবে।

বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা ব্যতীত নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সংলাপ শুধু সময়ের অপচয়। এতে আরও বলা হয়, ২০১২ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান বলবৎ করে আওয়ামী লীগ সরকার প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র বিকাশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। জনগণ ভোটের অধিকার হারিয়েছে।

বিএনপি নেতারা জানান, ২০১২ সালে কাজী রকিব কমিশন ও ২০১৭ সালে নুরুল হুদা কমিশন গঠনের আগে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অংশ নেন। নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমঝোতা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সেই পথে যায়নি। বরং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফএআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত (২০১৪ সাল বাদ দিয়ে) ছয় বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা পাচার ইস্যুতে আলোচনা হয়। এ ছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ ইউএনএইচআরসির এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত বাংলাদেশে গুমের তথ্য নিয়েও আলোচনা হয়। ইউএনএইচআরসির প্রতিনিধি দলকে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেওয়ারও দাবি জানায় স্থায়ী কমিটি।