গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা দুটি ইউনিয়নের নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত দুজন আসামি। তারা হলেন, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য শাহজামাল মন্ডল মোরগ প্রতীকে ও উড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে আব্দুছ ছালাম খাঁন টিউবওয়েল প্রতীকে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ফুলছড়ি উপজেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার লংকারচর গ্রামের কৃষক সুমার আলীর সঙ্গে পাশ্ববর্তী ডাকাতিয়ারচর গ্রামের শাহজামালের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। গত ১০ ফেব্রুয়ারি সুমার আলী তার বোন জামাই চাঁন মিয়াকে নিয়ে ওই জমিতে সেচ দিতে গেলে শাহজামালের নেতৃত্বে তার লোকজন ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে দুজনকে গুরুতর আহত করে। পরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চাঁন মিয়া মারা যান।
এ নিয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি নিহতের শ্যালক সুমার আলী বাদী হয়ে শাহজামালকে প্রধান আসামি করে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আরও ১৪ জনকে আসামি করা হয়। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পুলিশ শাহজামালসহ ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
মামলার বাদী সুমার আলী বলেন, শাহজামাল একজন হত্যা মামলার পলাতক আসামি। পুলিশের কাছে তিনি পলাতক হয়েও এলাকায় প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য প্রার্থী শাহজামাল মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য লাল মিয়াকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে পাশ্ববর্তী উড়িয়া ইউনিয়নের সাদেক খাঁ বাজারে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পরের দিন নিহতের ছেলে মুরশিদ আলী বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে ফুলছড়ি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার ১১ নম্বর আসামি আব্দুছ ছালাম খাঁন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে উড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। আব্দুছ ছালাম খাঁনের বাবা বর্তমান ইউপি সদস্য সাদেক খাঁনও ওই হত্যা মামলার ১২ নম্বর আসামি।
জানতে চাইলে নিহত লাল মিয়ার ছেলে মুরশিদ আলী বলেন, ‘মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে আমার বাবার হত্যাকারী আব্দুছ ছালাম খাঁন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন। এমনকি আমরা পাশ্ববর্তী ইউনিয়নের লোক হলেও আব্দুছ ছালাম খাঁন ভোটকে কেন্দ্র করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে আমাদের নিকট আত্মীয়রা ভীতিকর অবস্থার মধ্যে আছেন। খুনের আসামিকে জনগণ প্রত্যাখান করবে।’
জানতে চাইলে উড়িয়া ইউপি’র ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী আব্দুছ ছালাম খাঁন বলেন, ‘আমি সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয়ে আবেদন জানিয়েছি। লাল মিয়ার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি।’
এ ব্যাপারে ফুলছড়ি থানার পুলিশ পরিদর্শক কাওছার আলী বলেন, ‘লাল মিয়া হত্যা মামলার আসামি আব্দুছ ছালাম খাঁন জামিনে আছেন। আর এরেন্ডাবাড়ী ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য প্রার্থী শাহজামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’
Leave a Reply