ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো লা লিগা ছাড়ার পর তা জৌলুস হারায় অনেকটাই। এবার লা লিগা থেকে বিদায় নিয়েছেন অন্যতম সেরা আকর্ষণ লিওনেল মেসিও। আসরের দুই সেরা তারকাকে ছাড়া এ মৌসুমে লা লিগা কেমন হবে তা নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত আয়োজক থেকে সমর্থকরা। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে মেসি-রোনালদোবিহীন লা লিগা।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেরিতে শুরু হওয়া গত আসরের আগেও একবার মেসির ক্লাব ছাড়ার উপলক্ষ তৈরি হয়েছিল। সেবার স্বেচ্ছায় ঠিকানা বদলাতে চেয়েছিলেন, পারেননি। এবার থাকতে চেয়েছিলেন, সেটাও পারলেন না। ফুটবল বিশ্বকে চমকে দেওয়া এ দুই ঘটনার মাঝে ২০২০-২১ আসর জন্ম দিয়েছে আরও অনেক গল্পের। নতুন লড়াই শুরুর আগে পেছন ফিরে দেখে নেওয়া যাক, নানা কারণে একটু ভিন্ন ও স্মরণীয় হয়ে থাকা স্পেনের শীর্ষ লিগের গত আসর।
লা লিগা মানেই যেন দুই ঘোড়ার দৌড়- প্রচলিত কথাটাকে ভুল প্রমাণ করে গতবার অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ যে শিরোপা উৎসব করেছিল, সেটিই আসন্ন আসরকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের সামনে তাই এবার শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন আর গতবার নতুনভাবে নিজেদের মেলে ধরা অ্যাটলেটিকোর সামনে মুকুট ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণা, ১০ দিনের টানাপড়েনের পর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার থেকে যাওয়া, বার্সেলোনা থেকে বিতাড়িত হয়ে লুইস সুয়ারেজের অ্যাটলেটিকোয় স্মরণীয় অভিষেক, ঠাসা সূচির ফুটবলে বড় দুই দলের অধারাবাহিকতা, শেষ রাউন্ডের শেষ মিনিট পর্যন্ত শিরোপা লড়াই এবং দুই জায়ান্টকে টপকে দিয়েগো সিমিওনের দলের শেষ হাসিÑ কী ছিল না গত মৌসুমে!
করোনা ভাইরাসের কারণে ২০১৯-২০ মৌসুম দেরিতে শেষ হওয়ায় গত আসর শুরুও হয় দেরিতে। তবে মাঝের বিরতি ছিল কম। তারই মাঝে বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় মেসির ‘বার্সেলোনায় আর থাকব না’ ঘোষণা। অনেক নাটকীয়তার পর তৎকালীন ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ মারিয়া বার্তামেউ মেসিকে ক্লাবে থাকতে একরকম বাধ্য করেন চুক্তির বিশেষ শর্তে উল্লেখিত সময়ের বেড়াজালে।
তবে মেসিকে ক্লাবে ধরে রাখলেও ক্লাব ছাড়তে বাধ্য করা হয় অভিজ্ঞ অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সুয়ারেজকে। বন্ধুর প্রতি ক্লাবের এমন আচরণে নাখোশ ছিলেন মেসি নিজেও।
লিগে ২১ গোল করে দলকে শিরোপা জেতানোর পাশাপাশি বার্সেলোনাকে জানিয়ে দেন, এখনো ফুরিয়ে যাননি তিনি। অন্যদিকে টানা দ্বিতীয় মৌসুম লিগ জিততে ব্যর্থ বার্সেলোনার একমাত্র আশার আলো হয়ে ছিলেন মেসি। ৩০ গোল ও ১১টি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। জিতে নেন রেকর্ড অষ্টমবারের মতো লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার, পিচিচি ট্রফি। শীর্ষ তিন দলের বাইরে সেভিয়া ছাড়া অন্য কোনো দল তেমন চমক জাগাতে পারেনি। ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে চারে থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেয় দলটি। এবারের আসরে শুধু বার্সেলোনাই শক্তি হারায়নি, তারকা খেলোয়াড় হারিয়েছে রিয়ালও। তাদের গত পাঁচ বছরের অধিনায়ক এবং রক্ষণের বড় ভরসা সার্জিও রামোস চুক্তি শেষে ফ্রি ট্রান্সফারে চলে গেছেন। দুজনই যোগ দিয়েছেন ফ্রান্সের পিএসজিতে। তবে লা লিগা শুরুর আগে ঘুরেফিরে আসছে মেসির দলবদলের খবর। প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসের রেকর্ড গোলদাতাকে ছাড়া স্পেনের শীর্ষ এই লিগ অনেকটাই তার রঙ হারাবে বলে অভিমত অনেকের। বড় ক্ষতি বার্সেলোনার জন্যও; গত মৌসুমের অনেকটা সময় ভোগা দলটি যে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিল এই তারকার কাঁধে ভর করেই।
Leave a Reply