করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা অব্যাহত থাকায় ক্ষতির পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানা গেছে। বিধিনিষেধ দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে, তা বলাই বাহুল্য। করোনার শুরু থেকে বিগত ১৫ মাসের মধ্যে অন্তত সাড়ে ৬ মাসই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি নানাভাবে সীমিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে করোনার শুরু থেকে মে পর্যন্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাতে দেখা যায়-করোনার প্রভাবে দেড় বছরে ব্যাংকিং খাতে টাকার প্রবাহ বাড়লেও ঋণের প্রবাহ বাড়েনি। এতে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে অলস টাকা। অবশ্য করোনার মধ্যে আর্থিক খাতে অনলাইন লেনদেন ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বাড়লেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও আয় খাত। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণেই কর্মসংস্থান কমেছে আর এর প্রভাবে হ্রাস পেয়েছে মানুষের আয়। আয় কমে যাওয়ায় আর্থ-সামাজিকভাবে দেশের বিশাল একটি জনগোষ্ঠী দুর্বল অবস্থানে নিপতিত হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় করোনা মোকাবিলায় সব মানুষকে টিকার আওতায় আনার পাশাপাশি দেশে বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে বিনিয়োগে মন্দাভাব কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
বিশ্বের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা করোনার প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ও আর্থিক কাঠামোর করুণ পরিণতির ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, করোনার অভিঘাতে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা যে কোনো আর্থিক মন্দার চেয়ে খারাপ হবে। করোনাভাইরাসের প্রকোপ বিশ্ব অর্থনীতিকে যেমন সংকটে নিমজ্জিত করেছে, একইভাবে দেশের অর্থনীতিও নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বিপর্যয় নেমে আসার পূর্বাভাস দিয়েছে। ইতোমধ্যে দফায় দফায় নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা সৃষ্টির যেসব আলামত স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, তা নিয়ে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা গভীরভাবে চিন্তিত।
অতীতে আমাদের অর্থনীতি নানামুখী প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুর্যোগ অতিক্রম করে এগিয়েছে। দেশের পরিশ্রমী মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন; আশা করা যায়, এবারও সব ধরনের প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন তারা। তবে এজন্য বিভিন্ন প্রণোদনার আওতায় প্রদেয় ঋণ সহায়তার সুষ্ঠু ব্যবহারের পাশাপাশি সঠিক সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো মোকাবেলার উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রকৃত উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে।
Leave a Reply