খেলা বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। খেলা মন বা মস্তিষ্ককে ফুরফুরে করে তোলে। প্রায় সব রকমের খেলাই আনন্দ দেয়। খেলতে যেমন ভালো লাগা কাজ করে, তেমনি প্রিয় দলকে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠতেও আমরা ভালোবাসি।
আমাদের একেকজনের একেক রকমের খেলা প্রিয়। কোনো কোনো খেলা অনেকেই পছন্দ করেন, ভালোবাসেন। আমাদের দেশে সর্বাধিক জনপ্রিয় দুটি খেলা হলো ফুটবল ও ক্রিকেট। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে। ফুটবলে এগিয়ে না থাকলেও ফুটবলের প্রতি রয়েছে ক্রীড়ামোদীদের প্রচুর ভালোবাসা।
গ্রাম, গঞ্জ, শহরের শিক্ষিত, স্বল্পশিক্ষিত, ব্যবসায়ী, কর্মচারী- প্রায় সব শ্রেণির সব বয়সী মানুষের আবেগের জায়গাজুড়ে রয়েছে ফুটবল। ফলে বিশ্ব ফুটবলে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে না থাকলেও এদেশের ফুটবলমোদীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সমর্থন করে থাকেন। তবে দেশের সিংহভাগ ফুটবলমোদীর সমর্থন ফুটবল বিশ্বে রাজত্বকারী প্রধান দুটি দেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের প্রতি।
এ দেশ দুটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশের ফুটবলমোদীদের হৃদয়েই স্থান করে নিয়েছে। এ সমর্থকরা একে অপরের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। দেশ দুটির অনেক ভক্ত বা সমর্থক দলের জয়-পরাজয়ে যে কোনো কিছু করে বসতে পারে। প্রিয় দল হারলে কান্নায় ভাসে, টিভি ভাঙে, না খেয়ে থাকে। বিজয়ী হলে আনন্দ মিছিল বের করে।
বর্তমানে চলছে কোপা আমেরিকা ফুটবল টুর্নামেন্ট। ফাইনাল ম্যাচ বাকি। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সেই ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে চলছে তুমুল আলোড়ন। আলোড়ন হবেই বা না কেন, ফাইনাল ম্যাচটিতে লড়বে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। প্রায় ১৪ বছর পর কোনো ফাইনালে মুখোমুখি হবে দল দুটি। উভয় দলের সমর্থক গোষ্ঠীর মাঝে তাই চরম উত্তেজনা। খেলা নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা থাকা ভালো; কিন্তু অতিরিক্ত উত্তেজনা ও আবেগ বিপজ্জনক। সেই উত্তেজনা ও আবেগ থেকে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বাংলাদেশের মানুষ একটু বেশিই আবেগপ্রবণ। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আবেগ মানুষকে বিকারগ্রস্ত করে তোলে। অতিমাত্রার আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেকে আত্মঘাতীও হয়েছে। ১৯১৮ বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ০-৩ গোলের লজ্জাজনক হার মেনে নিতে না পেরে রাজধানীতে আর্জেন্টিনার এক সমর্থক আত্মহত্যা করেছিলেন বলে খবর রয়েছে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা থেকে বিভিন্ন সময় দেশের অনেক জায়গায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
গত ৭ জুলাই একটি পত্রিকার খবর- ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত চার’। খেলার প্রতি আবেগ-ভালোবাসা যখন এমন অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে রূপ নেয় তখন খেলা আর বিনোদন থাকে না, আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবারের ফাইনাল ম্যাচটিকে কেন্দ্র করে এরকম কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সেটাই প্রত্যাশা। প্রিয় দলের প্রতি ভালোবাসা হোক বিনোদনের জায়গা থেকে, আনন্দ ও উল্লাসে। কোপা আমেরিকার আকর্ষণীয় এই ফাইনাল ম্যাচটি হোক উপভোগ্য।
রাশেদ বিন শফিক : শিক্ষার্থী, মৌলভীবাজার
Leave a Reply