শিক্ষায় অটো পাসের সংস্কৃতি আমাদের পেয়ে বসেছে। গত বছরের এইচএসসির পর এবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রদেরও অটো পাস দিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ একে অটো পাস বলতে চাইছে না। একে তারা বলছে ‘শর্তযুক্ত প্রমোশন’। এই অদ্ভুত ‘প্রমোশন’ এর ব্যাপারে ব্যাখ্যা হচ্ছে, পরিবেশ স্বাভাবিক হলে অটো পাস পাওয়াদের লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ দিকে গত বছর অটো পাস পাওয়া এইচএসসি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ রুদ্ধ হয়ে আছে। গত বছরের শেষের দিকে এদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশন শুরু হয়ে ইতোমধ্যে প্রথম বর্ষের পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোনো ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারেনি।
ইতোমধ্যে উচ্চশিক্ষার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম করা হয়েছে। সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত এ তিনটি ভাগে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গুচ্ছাবদ্ধ হয়েছে। পুরান পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকিরা গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিচ্ছিন্নভাবে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ দেয়া হচ্ছে। করোনার কারণ দেখিয়ে সেসব তারিখ পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনোটিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই দফা ভর্তির তারিখ প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য ৩০ জুন ও ১ জুলাই এবং মূল পরীক্ষা ১০ জুলাই নির্ধারিত করা আছে। এ ছাড়া রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট মিলিয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ১২ জুন হওয়ার কথা ছিল, এখন পিছিয়ে সেটি ১২ আগস্ট করা হয়েছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের তারিখ নির্ধারিত ছিল ৩১ জুলাই। সেটি পিছিয়ে এখন নতুন তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর। এই শিক্ষাবর্ষে কেবল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় গত ২ এপ্রিল।
দেশের মোট ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টিতে প্রথমবর্ষে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে কোনো একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও করোনা শুরু হওয়ার পর প্রথম বর্ষে ছাত্র পায়নি। অন্য দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এসএসসি ও এইচএসসির গ্রেডের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির লক্ষ্যে ৮ জুন ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু করার কথা ছিল। ৭ জুন কর্তৃপক্ষ ভর্তি কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজে ১৭ জুলাই ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার নতুন তারিখ দেয়া হয়েছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েটে) ভর্তি আবেদনের সময়সীমা দুই মাস পিছিয়ে ১৮ আগস্ট করা হয়েছে।
করোনার মধ্যে আমাদের সব ধরনের সামাজিক-রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। এসব কর্মকাণ্ডে শিক্ষক ও ছাত্ররাও অংশগ্রহণ করছে। তাতে কিন্তু কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। অথচ করোনার শুরুতে আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে রেখেছি। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শতভাগ বন্ধ থাকার নজির নেই। অথচ করোনা যে দেশগুলোতে সবচেয়ে মৃদু আঘাত হেনেছে তার মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ। ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি ভারতে কয়েক লাখ করে মানুষ মারা গেছে। ওই সব দেশে নানাভাবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমকে অব্যাহত রেখেছে। আমরা শুধু পরীক্ষাও নিতে পারছি না। এমন আত্মঘাতী অবস্থাকে কোনোভাবে করোনা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ বলা যায় না। মনে হচ্ছে যেন আমরা বাগে পেয়ে দেশের শিক্ষার ওপর প্রতিশোধ নিলাম। আমরা মনে করি, ভর্তি পরীক্ষা এবং বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা সহজে গ্রহণ করা যায়। অনলাইনে এর আয়োজন খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার নয়। অন্য দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতির মাধ্যমে নিলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। একইভাবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পড়াশোনার জন্য খুলে দিলেও অন্যান্য সেক্টরের মতো এটিও চলতে পারে। তবে এ ব্যাপারে শিক্ষা বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের কোনো আগ্রহ আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না।
Leave a Reply