পৃথক চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ এক মাসে ৪২ লাখ টাকা সরিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব বিভাগের জুনিয়র হিসাব কর্মকর্তা ফয়সাল মাহবুব। বিগত ছয় মাস ধরে এসব হিসাবে ১৫টি ভুয়া আইডি খুলে বেতন-ভাতার ফান্ড থেকে ৭২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সরানো হয়েছে। এসব টাকা ব্যাংকে ঢোকার পরই উত্তোলন করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবগুলোতে বর্তমানে কোনো টাকা নেই। এ ঘটনায় গঠিত ২ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে।
তদন্তে ৭২ লাখ টাকার প্রমাণ পেলেও সরকারি ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফয়সালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে প্রকৃত অর্থের হিসাব নিয়ে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে। বিভাগের সম্মান রক্ষায় টাকার অঙ্ক কম দেখানো হয়েছে এমন গুঞ্জন এখন রেল অঙ্গনে। কারণ গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় দেড় কোটি টাকা সরানোর কথা স্বীকার করেছিল। ফলে দুদক তাদের তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।
রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বসাকুল্যে ৭২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ফয়সাল একাই সরিয়েছে। তদন্তে কোনো সহযোগীর নাম ওঠে আসেনি। যে চারটি হিসাবে টাকা নেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে কোনো টাকা নেই। তবে ব্যাংকের কাছে তথ্য চাইলে তারা দিতে অপারগতা জানিয়েছে রেলের তদন্ত কমিটিকে। তবে কমিটি জানতে পেরেছে চারটি হিসাবে বর্তমানে কোনো টাকা নেই। রেলের আইবাস প্লাস থেকে টাকা ট্রান্সপার করার পরই সেগুলো উত্তোলন করা হয়েছে। টাকাগুলো তৃতীয় স্ত্রী ও অনলাইন জুয়া খেলায় ওড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন ফয়সাল।
টাকা উদ্ধারের বিষয়ে রেল কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো বিষয়টি এখন পুলিশ দেখবে। মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছে ফয়সাল। আদালতের মাধ্যমে ব্যাংকের তথ্য সংগ্রহ করে কীভাবে টাকা খরচ হয়েছে এবং কার কাছে এসব টাকা গেছে সবকিছুই পুলিশ উদ্ধার করবে।
দুদকের ওই মামলার এজহারে অভিযোগ করা হয়েছে, ৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ফয়সাল। এসব টাকা মূলত পূর্বাঞ্চলের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বেতন ও বিভিন্ন বোনাস-ভাতার টাকা। আইবাস সিস্টেমে ভুয়া বিল দাখিল ও পাস দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন ফয়সাল। গত ১২ মে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম মামলাটি দায়ের করেন। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, রেলের তদন্ত প্রতিবেদন তাদের নিজস্ব। আইবাস প্লাস সিস্টেম ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে কিভাবে টাকা সরানো হয়েছে তা নিয়ে উচ্চতর তদন্ত হচ্ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (এফঅ্যান্ডসিও) কামরুন্নাহার আমাদের সময়কে বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ৭২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সরানোর প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ধরা না পড়লে হয়তো মোটা অঙ্কের টাকা চলে যেতে। গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে বড় দুর্ঘটনা থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। তিনি বলেন, ফয়সাল একাই সব টাকা তার চারটি হিসাবে সরিয়ে নিয়েছে। তার সঙ্গে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তার ব্যাংক হিসাবে টাকা রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংক আমাদের সেই তথ্য দেয়নি। আদালতের মাধ্যমে চাইলে তথ্য দিতে পারবে বলে জানায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে যতটুকু জেনেছি বর্তমানে খুব বেশি টাকা নেই। কারণ হিসাবে টাকা ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে উত্তোলন করে ফেলত। টাকা উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব এখন পুলিশ দেখবে।
জানা গেছে, বিগত ছয় মাস ধরে ধাপে ধাপে টাকা সরানো হচ্ছিল। গত ৮ মে রেলের এক কর্মকর্তার হিসাবে ঈদ বোনাস দুবার জমা হলে তিনি বিষয়টি বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তার নজরে আনেন। এর পর দিনভর তদন্ত করে ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে ওইদিন রাতেই ফয়সালকে আটক করে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নেওয়া হয়। পরদিন রবিবার নগরীর খুলশী থানায় মামলা দায়েরের পর তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। গঠন করা হয় ২ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
Leave a Reply