ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের কথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা বর্ণবাদী প্রথাকে শক্তিশালী করবে। এ জন্য ফিলিস্তিনি জনগণ যেকোনো মূল্যে ওই একপেশে পরিকল্পনা রুখে দেবে। মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনবিষয়ক এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীর সেরা চুক্তি নামের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক জেরুসালেম শহরকে ইসরাইলি ভূখণ্ড হিসেবে দেখানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহর জেরুসালেমের বাইরের আবু দিস নামের একটি ছোট গ্রামকে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই পরিকল্পনায় জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের অংশবিশেষ ও গাজা উপত্যকা নিয়ে নামমাত্র একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছে, যে রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী থাকবে না।
মাহমুদ আব্বাস বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প থেকে উত্থাপিত কথিত শান্তি পরিকল্পনা মূলত বর্ণবাদী প্রথাকে শক্তিশালী করবে; যা কেবল ফিলিস্তিনিদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করার ল্েযই জনসম্মুখে আনা হয়েছে। আমাদের জনগণ এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কেননা ফিলিস্তিন এবার ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাকে গুঁড়িয়ে দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত।’
তা ছাড়া, মঙ্গলবারের ওই বৈঠকে ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে নিরাপত্তা পরিষদের ইউরোপীয় দেশগুলো। বৈঠক শুরু হওয়ার আগে বেলজিয়াম, এস্তোনিয়া, জার্মানি, পোল্যান্ড ও ফ্রান্সের প থেকে ফিলিস্তিন সঙ্কট প্রসঙ্গে একটি যৌথ বিবৃতি পাঠ করা হয়। এতে বলা হয়, আমেরিকার ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ পরিকল্পনায় জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব উপো করা হয়েছে। জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন করে জাতিসঙ্ঘের আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের প থেকে উত্থাপিত একপেশে কথিত শান্তি পরিকল্পনা ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’র সমালোচনা করে একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত এ শান্তি পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেন তারা।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা বলছেন, মার্কিন প্রশাসন যে শান্তি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে তা ইসরাইলের পে যায় এবং আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল বলেন, ইইউ মনে করে ট্রাম্পের এ উদ্যোগের ফলে ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্যোগটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মাপকাঠি থেকে বের হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ন্যায়বিচার ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় পরে মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
হল্যান্ড থেকে নির্বাচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ক্যাটি পিরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনা একতরফা, অবৈধ এবং আন্তর্জাতিকভাবে উসকানি দেয়ার শামিল। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা মূলত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরাইলি অবৈধ বসতি নির্মাণ এবং পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টাকে বৈধতা দেয়। সূত্র : আলজাজিরা।
Leave a Reply