সরকার থেকে বলা হয়েছিল, ইলিশের সুষম প্রজনন ও নির্বিঘ্ন বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত উপকূলের নির্দিষ্ট এলাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারবেন না। এ জন্য তাঁদের পরিবারপিছু দুই মাসের খোরাকি বাবদ ৮০ কেজি চাল দেওয়া হবে। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তখন সরকারের প্রতিশ্রুত ও ছাড় করা ৮০ কেজি চালের বদলে তাঁদের হাতে পৌঁছাচ্ছে মাত্র ৩৫-৩৬ কেজি করে, অর্থাৎ অর্ধেকের কম। কৈফিয়ত চাইলে চাল বণ্টনের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে, ‘৩৫ কেজি দিই, হেই তো বেশি।’
বুভুক্ষু মানুষের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে খাওয়ার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত মিলছে ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে। সেখানে ১ হাজার ৩৪৫ জন কার্ডধারী জেলের মধ্যে ৭৮৪ জনকে চাল বরাদ্দ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। গত ২৯ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁদের মধ্যে এভাবে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। শুধু এখানেই নয়, জেলার অন্য ইউনিয়নগুলোতেও একই অবস্থা।
সোজা-সরল কথা হলো, সরকার পরিবারপ্রতি ৮০ কেজি চাল বরাদ্দ করেছে এবং জনপ্রতিনিধিদের সেই চাল বুঝিয়ে দিতে বলেছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা বলছেন, উপজেলার খাদ্যগুদাম থেকে ইউনিয়নে চাল আনতে সরকার নাকি পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়নি। এ কারণে জেলেদের প্রাপ্য চালেরই কিছু অংশ বিক্রি করে সেই পরিবহন খরচ জোগাতে হচ্ছে।
দৌলতখান উপজেলা পরিষদ থেকে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। নৌকায় করে এ দূরত্বে প্রতি টন চাল পৌঁছাতে ইউনিয়ন পরিষদ খরচ দেখিয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ টাকা। এ ইউনিয়নে বরাদ্দ হয়েছে ৬২ দশমিক ৭২ মেট্রিক টন। ইউনিয়ন পরিষদের হিসাবেই এ চাল বহনে খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা। বর্তমান বাজারদর অনুসারে সাড়ে তিন টন (সরকারি) চাল বেচলেই এ টাকা পাওয়া সম্ভব। এ সাড়ে তিন টন বাদ দিলেও প্রায় ৫৯ টন চাল অবশিষ্ট থাকে। তা দিয়ে একেকটি পরিবারকে ৭৬ কেজি চাল দেওয়া যায়। তার মানে কত বড় চুরি হচ্ছে, তা সাদাচোখেই বোঝা যাচ্ছে।
নিরন্ন জেলেদের এভাবে বঞ্চিত করছে এই নিষ্ঠুর চালচোরেরা। তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। আর চাল সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে পৌঁছে দিতে হবে। তারপর মৎস্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব মেনে সেখান থেকে ৪০ কেজির মজবুত প্যাকেট করতে হবে। তাহলে খাদ্যগুদাম থেকে চাল ‘আগাম বেচে দেওয়া’ বন্ধ হতে পারে।
Leave a Reply