ভারতের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর মৃত্যু কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এই সংখ্যা। প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্ত আর মৃত্যুতে নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশটিতে করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর এখন বিশ্বের কাছে ‘হটস্পট’ ভারত। অক্সিজেনের মজুত শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ফলে হাসপাতালগুলোতে বিনা চিকিৎসায় করোনা বা কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। অক্সিজেনের জন্য চার দিকে হাহাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুতে তাদের কবর দেয়া ও সৎকার করাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে। করবস্থান আর শ্মশানে জায়গা হচ্ছে না এত লাশের। সবমিলিয়ে ভারত মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষছে রাজ্য সরকারগুলো। আর নরেন্দ্র মোদির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ভিন্ন কথা।
এ দিকে কৃষকদের স্বার্থবিরোধী নতুন আইন তৈরির পর থেকেই করোনা মহামারীর মধ্যে ভারতের হাজার হাজার কৃষক রাজধানীর চার দিকে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও টানা ২০০ দিন আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে কৃষকরা। নতুন আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে এর নেতারা জানিয়েছে। এ ছাড়া মানুষ যেখানে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগী ধারণের ঠাঁই হচ্ছে না। করবস্থান আর শ্মশানগুলোতে যখন লাশের স্তুপ পড়ে থাকছে। ঠিক এ মুহূর্তেও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়াল লিগ তথা আইপিএল ক্রিকেট ম্যাচ চলছে। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে। এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা ও আজকালসহ দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
মৃত্যুর নতুন রেকর্ড
রোববার আন্তর্জাতিক সময় (জিএমটি) ২টা ৪৩ মিনিটে ওয়ার্ল্ডোমিটারে বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে তিন লাখ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। আর এ সময় মারা গেছে দুই হাজার ৭৬১ জন। এ পর্যন্ত দেশটিতে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যায় এটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল দুই হাজার ছয় শ’র কিছু বেশি।
সবমিলিয়ে ভারতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৯ জন। আর এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে এ লাখ ৯২ হাজার ৩১০ জনের। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বিপর্যস্ত ভারত বিশ্বে সর্বাধিক আক্রান্তের তালিকায় দ্বিতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় চতুর্থ অবস্থানে আছে। আক্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র শুধু ভারতের ওপরে। আর মৃত্যুর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও মেক্সিকো আছে ভারতের ওপরে।
অক্সিজেনের জন্য হাহাকার
ভারতের সর্বত্রই এখন অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে অক্সিজেন না পেয়ে। দিল্লি ও মুম্বাইয়ের অবস্থা সবচেয়ে বেগতিক।
দেশটির বিভিন্ন শহরে অক্সিজেন সিলিন্ডারের দোকানের সামনে ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে লাইন। কিন্তু অনেক দোকানেই নেই অক্সিজেন। এককথায় ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে ভারত।
এ দিকে, দিল্লির নামিদামি হাসপাতালগুলো অভিযোগ করেছে চাহিদাপত্র দেয়া হলেও কেন্দ্রীয় সরকার পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করছে না। টেলিফোন করে অক্সিজেন চাওয়া হলেও অপরপ্রান্ত থেকে খারাপ ভাষা শুনতে হচ্ছে। যার জেরে ক্ষুব্ধ চিকিৎসক থেকে আদালত। তাই আদালতের হুঁশিয়ারি অক্সিজেন নিয়ে কোনো গাফিলতির প্রমাণ মিললেই দেয়া হবে ফাঁসি।
অক্সিজেনের জোগান ও দেশে সহজলভ্য করতে মোদি সরকার শনিবার থেকেই বিদেশ থেকে আমদানি করা অক্সিজেন ও সিলিন্ডারের ওপর থেকে ১২ শতাংশ শুল্ক ছাড় দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। এতে বাজারে অক্সিজনের দাম কমবে বলে মনে করছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।
দিল্লিজুড়ে করোনায় মৃতের হারের ঊর্ধ্বগতির মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন গোরস্থানে গণকবর খুঁড়তে দেখা যায়। একইসাথে গণহারে সৎকার চলে শহরের প্রধান শ্মশানগুলোতেও।
Leave a Reply