ভারতের মতো বিভিন্ন ভাষা, নানা জাতিসত্তার দেশ শাসন করছে বিজেপি। ২০১৪ সালে প্রথম দফার চেয়ে ২০১৯ সালে দ্বিতীয় দফায় লোকসভা নির্বাচনে আরও বেশি জনসমর্থন পেয়েছে। এর পরও বিভিন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও মাঠ নিজেদের দখলে নিয়েছে। কিন্তু এবার পশ্চিমবঙ্গে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দলটি।
পশ্চিমবঙ্গে তিন দশকের বেশি সময় শাসন করেছে বাম জোট। এর পর ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে। বাম ও তৃণমূলের মধ্যে দলগত পার্থক্য থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিউনিস্ট ঘরানার নেত্রী। দীর্ঘদিন বাম শাসনের ফলে রাজ্যে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কাজেই চলমান বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যদি ক্ষমতায় আসে তা হলে সেটি শুধু ক্ষমতার রদবদল হবে না, সেটি বড় ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও স্পষ্ট হবে। বিজেপির জন্য মূল চ্যালেঞ্জ এখানেই।
দলটি প্রায় গোটা ভারত শাসন করছে হিন্দুত্ববাদী শক্তি দিয়ে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এর দাপট তুলনামূলক কম। আর এ কারণেই এ রাজ্যে প্রচারে বিজেপি কৌশল খানিকটা পাল্টেছে। এখানে যতটা না ‘রামশাসন’ কায়েম করার কথা বলছে, তার চেয়ে বেশি বলছে উন্নয়নের কথা। বিজেপি মতাদর্শিক সেøাগানের পরিবর্তে এখানে তারা বিভিন্ন নাগরিক অধিকারের কথা বলছে। যদিও কোথাও যে ‘জয় শ্রী রাম’ শোনা যায়নি তা না। কিন্তু সেটিকে মূল অস্ত্র বানায়নি তারা।
ইতোমধ্যে রাজ্যে আট পর্বের মধ্যে তিন পর্বের নির্বাচন হয়ে গেছে। আজ শনিবার চতুর্থ পর্ব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ পর্বে ৫ জেলার ৪৪ কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে, ওই ৪৪ কেন্দ্রে ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৩ বছরে বিজেপির ভোট বেড়েছে ৩ গুণেরও বেশি। জা কোচবিহার জেলার ৯ এবং আলিপুরদুয়ারের ৫টি বিধানসভা আসনের সব কটিতেই ভোট হবে। এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টি, হাওড়া জেলার ১৬টির মধ্যে ৯টি এবং হুগলির ১৮টির মধ্যে ১০টি আসন রয়েছে এই তালিকায়।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়- ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে এ আসনগুলোর মধ্যে তৃণমূল জিতেছিল ৩৯টিতে। বিজেপি দখল করেছিল মাত্র ১টি। বামেরা পেয়েছিল ৩টি আসন। আর তাদের সহযোগী কংগ্রেস জিতেছিল ১টিতে।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফলের হিসাবে তৃণমূল ওই ৪৪-এর মধ্যে ২৫টি এবং বিজেপি ১৯টি কেন্দ্রে এগিয়ে রয়েছে। আর আলাদাভাবে লড়ে বাম-কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য। আগেরবার বিধানসভা ৪৪টি আসনে তৃণমূল ৪৬.০২, বিজেপি ১২.১৩ এবং বাম-কংগ্রেস জোট ৩৫.৫ (২৮.৭৯+৬.৭১) শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলের ভোট কিছুটা কমে হয় ৪৪.৭৩ শতাংশ। বিজেপির বেড়ে হয় ৪০.৮৮ শতাংশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ভোট বৃদ্ধির হার ধরে রাখাই এ বার পদ্ম শিবিরের বড় চ্যালেঞ্জ।
চলতি নির্বাচনে চতুর্থ দফাতেই প্রথম ভোট হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে কোচবিহার জেলায় ৯টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনেই জিতেছিল তৃণমূল। ১টি পেয়েছিল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল বলছে, বিজেপি সেখানে ৭ এবং তৃণমূল মাত্র ২টি কেন্দ্রে এগিয়ে। উত্তরবঙ্গের আর এক জেলা আলিপুরদুয়ারের ৫টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০১৬ সালে তৃণমূল জিতেছিল ৪টিতে। মাদারিহাট গিয়েছিল বিজেপির খাতায়। তিন বছর পরে লোকসভা ভোটে সব কটি আসনেই এগিয়ে যায় বিজেপি।
তবে তৃণমূলের ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অবশ্য তিন বছরের মধ্যে পরিবর্তনের চোরাস্রোত দেখা যায়নি।
নির্বাচনের আগে জরিপের ফল তৃণমূলের দিকে হেলে ছিল কিন্তু নির্বাচনের আগের জরিপ পরে পাল্টে যেতে সময় লাগে না। এর ওপর তিন পর্বের নির্বাচনে বিপুল ভোটারের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। শেষ পর্যন্ত ভোটারের মন কোন দিকে গেছে বলা মুশকিল। কাজেই টানটান এ উত্তেজনার ফল জানার জন্য আমাদের ২ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
Leave a Reply