দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এক্ষেত্রে প্রতিদিনই সৃষ্টি হচ্ছে নতুন রেকর্ড। দেশের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাব্যবস্থা এমনিতেই নাজুক।
তার ওপর কোভিড রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। একদিকে হাসপাতালগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী বেড নেই, আইসিইউ ইউনিট নেই, নেই ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা; অন্যদিকে গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সরঞ্জামেরও সংকট দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে অক্সিজেন সিলিন্ডার, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মতো জরুরি সরঞ্জামের তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ও মাস্কেরও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবাই কেবল ব্যাহত হচ্ছে না, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ সংকটের দ্রুত সমাধান কাম্য।
আমাদের মনে আছে, গত বছর ঠিক এ সময়ে দেশে যখন কোভিডের প্রকোপ বাড়ছিল, তখনও সৃষ্টি হয়েছিল এমন অবস্থা। একদিকে করোনার চিকিৎসা নিয়ে দুর্ভোগ, অন্যদিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব-এ অবস্থায় চিকিৎসক ও নার্সদের একটি বড় অংশ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছিলেন। আমরা আশা করেছিলাম, গত এক বছরে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে। অভিজ্ঞতার আলোকে নেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা। আগে কোভিড রোগীর চিকিৎসায় চিকিৎসক ও নার্সদের যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব ছিল। এখন সে সমস্যা অনেকটাই কেটে গেছে।
তবে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব কেন থাকবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। শীতকালে করোনার প্রকোপ না বাড়লেও এ ভাইরাসের নতুন ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সে কথা মাথায় রেখে কোভিড রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত ছিল সংশ্লিষ্টদের। সেটা না করার পরিণতিতে দেখা দিয়েছে সংকট।
বস্তুত শুরু থেকে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকলে, দিকনির্দেশনা থাকলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। মাঝখানে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও এ ক্ষেত্রে শৈথিল্যের সুযোগ নেই। বর্তমানে সব কোভিড হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পিপিই থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়া করোনার চিকিৎসা কার্যক্রমে যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে, তা দূর করতে হবে স্থায়ীভাবে। আমরা আশা করব, কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ যাতে দ্রুততম সময়ে এসে পৌঁছে, সে ব্যাপারে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব সীমাবদ্ধতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে দেশে করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেহেতু পরিস্থিতি এখন আবার ক্রমেই খারাপ হচ্ছে, সেহেতু স্বাস্থ্যসহ জরুরি সেবা খাতের দিকে সরকারের বাড়তি মনোযোগ দেওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করি আমরা।
Leave a Reply