আন্তর্জাতিক সীমারেখা মুছে জন্ম হয়েছে ‘অন্য এক বাংলা’র। কিছুক্ষণের জন্য হলেও মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল দুই দেশ- বাংলাদেশ ও ভারত। তবে মিলনের জায়গাটা কারও নয়, ‘নোম্যান্সল্যান্ড’। কোনো দেশের ঠিকানা নেই সেখানে। দিনটি যেন শুধুই একুশের। দুই দেশের আপামর মানুষের। নেই কোনো কাঁটারের বেড়া, নেই কড়া চোখের নজরদারি। বিজিবি ও বিএসএফ জওয়ানদের সামনে সবাই মেতে ওঠেন ভাষার উৎসবে। সবার অপলকদৃষ্টিতে কেবলই বিস্ময় আর শ্রদ্ধা।
প্রতিবারের মতো এবারও বেনাপোল ও হিলি সীমান্তে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীরা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সাধারণ মানুষের গণজামায়েত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রক্তদান বা বইমেলার মতো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি।
বেনাপোল প্রতিনিধি আজিজুল হক জানান, বেনাপোল ও পেট্রাপোল শূন্যরেখায় নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে গতকাল বেলা ১১টায় ভাষাশহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও ভারতের পক্ষে বনগাঁ পৌর প্রশাসক শংকর আঢ্য শ্রদ্ধা
জানান। পরে শূন্যরেখায় ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বৃক্ষরোপণ করেন দুই দেশের অতিথিরা। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশি একশজন অতিথি পেট্রাপোল সীমান্তে আয়োজিত ভাষাশহীদদের স্মরণসভায় যোগ দেন। সেখানে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা তাদের মনোভাব ব্যক্ত করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন, জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল হক মঞ্জুসহ স্থানীয় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। ভারতের পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাবেক বিধায়ক গোপাল শেড, বিধায়ক মতি জ্যোৎস্না আঢ্যসহ স্থানীয় প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
জানা যায়, ২০০২ সালে বেনাপোল সরগম সংগীত একাডেমি ও ভারতের উত্তর ২৪ পরগনা একুশ উদযাপন কমিটি যৌথভাবে মাতৃভাষা দিবসের সূচনা করেন। পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে দুই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দিবসটি পালন করে আসছে। প্রথম বছরে যে সাড়া মিলেছিল, তা প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে যায়। সেই আবেগ পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তকে আজও ভাসিয়ে নিয়ে চলেছে।
হিলি প্রতিনিধি মিজানুর রহমান মিজান জানান, করোনার কারণে দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে সীমিত পরিসরে বাংলাদেশ-ভারত যৌথভাবে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সীমান্তের চেকপোস্ট গেটের ২৮৫নং মেইন পিলারের ১১নং সাবপিলারসংলগ্ন শূন্যরেখায় এই দিবসের আয়োজন করা হয়।
প্রথমে বিএসএফের বাধার কারণে শূন্যরেখায় আসতে না পারলেও পরে অনুমতি সাপেক্ষে নিজ নিজ অংশে দাঁড়িয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন সাধারণ মানুষ। তবে তাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি বিনিময় করতে দেওয়া হয়নি। তাই প্রথমে দুই দেশের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উভয় পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এর পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন অনেকেই।
এ সময় সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-উর রশীদ, ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা, পৌর মেয়র জামিল হোসেন, প্যানেল মেয়র মিনহাজুল ইসলাম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী, প্রেসক্লাবের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান এবং ভারতের পক্ষে বালুরঘাট পৌর মেয়র হরিপদ সাহা, জয়েন্ট মুভমেন্ট ফর করিডরের আহ্বায়ক নবকুমার দাশ, বিজিবির হিলি আইসিপি চেকপোস্ট কমান্ডার নায়েব সুবেদার ইয়াসিন আলী ও বিএসএফর হিলি ক্যাম্প কমান্ডার ইন্সপেক্টর বিজয় শিংসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply