কোর্স শিক্ষকের পদসহ পরীক্ষাসংক্রান্ত সব কার্যক্রম থেকে অবশেষে অব্যাহতি দেওয়া হলো বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌটুসী রায়কে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিক্ষার্থীদের নম্বর কম দেওয়ার। অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৭৬তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৭৬তম সভায় মৌটুসী রায়ের বিরুদ্ধে অব্যাহতির এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষক বিভাগের পরীক্ষাসংক্রান্ত কোনো বিষয়ে যোগ দিতে পারবেন না বলেও সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ৪০২ নম্বর কোর্সের ‘ট্রান্সলেনসস্টাডিজ’ বিষয়ের ৫০ নম্বরের কন্টিনিয়াস ফল প্রকাশ করে। ফল প্রকাশের পর ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা কোর্স শিক্ষক মোটুসী রায়ের বিরুদ্ধে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে গণ-আত্মহত্যা ও আন্দোলনের হুমকি দেন।
শিক্ষার্থীদের গণ-আত্মহত্যার হুমকির পর সেদিন মধ্যরাতে নিরাপত্তা চেয়ে তাজহাট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ওই শিক্ষিকা। নম্বর কম দেওয়া ও জিডির পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন শিক্ষার্থীরা বিভাগের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় চার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনা তদন্তে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রাব্বানীকে আহ্বায়ক, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদ এবং রসায়ন বিভাগের প্রধান তানিয়া তোফাজকে সদস্য করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে একাডেমিক কাউন্সিল। শিক্ষিকা মৌটুসী রায়কে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
এ বিষয়ে মোটুসী রায় সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৪-১৫ সেশনের চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফল প্রকাশের পর প্রায় সবাই আমার মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে আত্মহত্যা ও আন্দোলনের হুমকি দেয়। বিষয়টি অবগত করার পর উপাচার্যের পরামর্শ ও নির্দেশে বিভাগের অন্য দুই শিক্ষক আলী রায়হান সরকার, কাশফিয়া ইয়াসমীন ও উপাচার্যের পিএ আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে থানায় গিয়ে জিডি করি। তবে অব্যাহতির বিষয়টি আমি এখনো জানি না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মৌটুসী রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের কম নম্বর দেন। অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন থেকে শুরু করে সব কিছুতেই মানসিকভাবে টর্চার করে যাচ্ছিলেন তিনি। অন্য শিক্ষকদের কোর্সে, এমনকি বাকি সাতটি সেমিস্টারের রেজাল্ট ভালো থাকলেও এই শিক্ষিকার স্বেচ্ছাচারিতা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ফেলেছে।
Leave a Reply