ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচন ১৪ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। ফলে নির্বাচনী প্রচারে সরগরম পুরো শহর। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা শহর, চলছে মাইকিং ও মিছিল। মেয়র পদে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে একাট্টা আওয়ামী লীগ সব নেতাকর্মী। আর দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আছেন কিছুটা চাপে। অবশ্য ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দুদলেই রয়েছেন বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী।
মেয়র পদে ৫ প্রার্থী। তারা তারা হলেন- আওয়ামী লীগের শশধর সেন (নৌকা), বিএনপির মো. আমিনুল হক (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মো. শাহজাহান (জগ), স্বতন্ত্র ও বিএনপির বিদ্রোহী রকিবুল হাসান (নারিকেল গাছ) ও স্বতন্ত্র এম এইচ ইউসুফ (মোবাইল)।
গত পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছিল। আর বিদ্রোহী থাকলেও জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী। এবারের নির্বাচনেও বিদ্রোহীরা মাঠে থাকায় দলীয় প্রার্থীদের কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে বলে ধারণা স্থানীয়দের। দুই দলের দুই প্রার্থী ছাড়াও সাবেক দুইবারের মেয়র ও গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে বিদ্রোহী হয়ে মাঠে থাকা মো. শাহজাহান এবারও মাঠ ছাড়ছেন না। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ স¤পাদক ছিলেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। বিএনপির বিদ্রোহী হয়ে মাঠে রয়েছেন বিএনপির সদস্য রকিবুল হাসান সোহেল। গত নির্বাচনে তিনি না থাকলেও এর আগের নির্বাচনেও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাঠে ছিলেন। তখন তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই নির্বাচনেও বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় গত বৃহ¯পতিবার তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
২০১৫ সনের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মো. আমিনুল হক আওয়ামী লীগ প্রার্থী শশধর সেনকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে সেবার হেরে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী। এবার বিএনপি চাচ্ছে মেয়র পদ ধরে রাখতে, আর আওয়ামী লীগ চাচ্ছে দখল করতে। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সব অঙ্গ সহযোগী সংগঠন সব দ্বিধা ভুলে গিয়ে মাঠে নেমেছে নৌকাকে বিজয়ী করতে। বিএনপিও মেয়র পদ ধরে রাখতে দিন-রাত চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী শশধর সেন বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে গতবার নৌকার পরাজয় হয়েছে। তবে এবার বিদ্রোহীর প্রভাব তেমন প্রভাব পড়বে না। বিদ্রোহী প্রার্থী মো. শাহজাহান বলেন, দুইবার মেয়র থাকায় জনগণের কল্যাণে অনেক কাজ করেছেন। এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তাও রয়েছে তার। মানুষ তাকে ভোটে নির্বাচিত করবেন।
বিএনপির প্রার্থী মো. আমিনুল হক বলেন, গত পাঁচ বছর এলাকার নানা উন্নয়ন কাজ করায় জনতার রায় তার দিকেই যাবে। চলমান উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে বিজয়ী করবে পৌরবাসী।
বিদ্রোহী প্রার্থী রকিবুল হাসান সোহেল বলেন, নিজের জনপ্রিয়তার কারণে তার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নারিকেল গাছ প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করলে শুধু আশ্বাস নয় বাস্তবে পরিকল্পিত উন্নয়ন দেখবে জনগণ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউসুফ বলেন, তারুণ্যের প্রথম ভোট উন্নয়নের স্বার্থে হোক, শান্তির পক্ষে হোক। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও দরিদ্র, অসহায়, অসচ্ছল মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের স্বার্থে পৌরবাসী মোবাইল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবে।
এবার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে ফুলপুর পৌরসভায়। পাঁচ মেয়র প্রার্থী ছাড়াও নয় ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪৪ জন ও সংরক্ষিত ৩ ওয়ার্ডে ১৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফুলপুর পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ হাজার ৯৩৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১১ হাজার ১৪ জন ও নারী ১১ হাজার ৯২০ জন।
ফুলপুর পৌরসভা নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার সৈয়দা আশুরা আক্তার খাতুন বলেন, সব প্রার্থীকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচার চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply