আবু সাইদ জুয়েলের গোটা বাগানজুড়ে একেকটি গাছে শোভা পাচ্ছে দুই থেকে তিনশ কমলা। মিষ্টি স্বাদ, বড় আকার, আর গাঢ় হলুদ রঙের কমলা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে মিলছে কমলার আসল ঘ্রাণ। আর দার্জিলিং জাতের এই কমলার বাগান কিন্তু বাংলাদেশে, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে।
এরই মধ্যে জুয়েলের কমলা চাষের সাফল্যের কথা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিক। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন মানুষ দেখতে আসছে তার কমলা বাগান। অনেকেই সরাসরি বাগান থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাজা কমলা।
আবু সাইদ জুয়েল বলেন, ২০১১ সালের দিকে আমি ঠাকুরগাঁও বিএডিসি অফিসে যাই বীজের চেক নেওয়ার জন্য। আসার পথে পাশের হার্টিকালচার সেন্টার থেকে ২৪টি দার্জিলিং প্রজাতির চারা সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। চারাগুলো যত্নসহকারে উপজেলার মালঞ্চা এবং বীরহলি গ্রামে আমার নিজ খালি জায়গায় রোপণ করি।
গাছগুলো দুই বছরের মাথায় বড় হয়ে ফুল আসা শুরু করে। আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। আবারও হার্টিকালচার সেন্টারে গিয়ে দেখি- সাইট্রাস প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় কমলার গাছগুলো তুলে ফেলা হচ্ছে। সেখানকার ডিডি আমাকে বেশ কিছু গাছ দিয়ে বলেন, ‘আপনি তো গাছ অনেক পছন্দ করেন, এগুলো আপনার সংগ্রহে রেখে যত্ন করে দেখেন।’ তখন আমার একটা বিশ্বাস জন্মায়- আমি পারব।
জুয়েল বলেন, এরপর আমি দাজিলিং যাই একাধিকবার। যেহেতু কমলার সেখানকার শীত, মাটি, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করি এবং করণীয় ঠিক করে ফেলি। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রেও গেছি। আমি সেখানকার কমলা বাগান পরিদর্শন করেছি। সেখান থেকে খুঁটিনাটি জ্ঞান নেওয়ার চেষ্টা করেছি। দেশে ফিরে আরও দুই জাতের কমলার চারা ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। একটি অস্ট্রেলিয়ান অপরটি চাইনিজ। ৮/৯ বছর ধরে এর পেছনে লেগে থেকে আমি কমলা চাষের পদ্ধতি ভালোভাবে রপ্ত করে ফেলেছি।
এই সফল চাষি আরও বলেন, আমার বাগানে তিন জাতের কমলা গাছে এখন ফল আসছে। আমার বাগানের কমলার রঙ, আকার এবং মিষ্টতায় যে কোনো দেশ থেকে আমদানি করা কমলার চেয়ে উন্নত বলে আমি মনে করি। দার্জিলিংয়ের সঙ্গে এ আমাদের দেশের মাটির বেশ মিল রয়েছে। এ অঞ্চল একই অববাহিকায় হওয়ার দার্জিলিং জাতের কমলা চাষাবাদে এ ভূমি খুবই উর্বর। তাই এই অঞ্চলে কমলা চাষ কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে বলে আমি মনে করি।
দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ বলেন, এটি আশাতীত সফলতা। একটি গাছে ৩ থেকে ৪শ করে কমলা ধরছে। যার বাজারমূল্য অনেক। আশা করি দিনাজপুর অঞ্চলের শিক্ষিত তরুণরা এগিয়ে আসবে জুয়েলের কমলা চাষের সফলতা দেখে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলে কমলা চাষে কৃষি অর্থনীতিতে বিরাট সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
Leave a Reply