যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষীদের কোয়ার্টারে বৃহস্পতিবার রাতে আগুন লেগে ছয়টি পরিবারের সর্বস্ব ছাই হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপের পাশে বসে আহাজারি করছেন আছিয়া বেগম নামের এক নারী। ঘরের সঙ্গে পুড়ে গেছে তার ‘টাকার বালিশ’ও। এতে রাখা ছিল প্রায় ৮ লাখ টাকা। অবসরে যাওয়ার পর নিজের বাড়ি নির্মাণ করতে পেনশনের এই টাকা তুলে বালিশে ভরে রাখা হয়েছিল।
আছিয়া বেগম অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী। তার স্বামী আমিনুর রহমান প্রধান কারারক্ষী ছিলেন। তিনি অবসরে গেছেন দেড় বছর আগে। কারাগারের পাশেই শেখহাটি বাবলাতলা এলাকায় বাড়ি করছিলেন তারা। বাড়ির কাজের জন্য আমিনুর রহমানের পেনশনের ৮ লাখ টাকা তুলে ঘরে রাখা ছিল। এতগুলো টাকা নিরাপদে রাখতে কাপড়ের ছোট্ট একটি বালিশ বানিয়ে তাতেই টাকা রেখেছিলেন আছিয়া।
আহাজারি করতে করতে আছিয়া বেগম বলছিলেন, এশার নামাজ পড়ে উঠে ঘরে আগুন দেখে ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসি। পানি দেওয়ার জন্য সবাইকে ডেকেছি। পরে ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি দাউ দাউ করে সব জ্বলছে। টাকার বালিশসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আছিয়া বেগমের ছেলে আলভি আহমেদ জানান, কারাগারের কোয়ার্টার থেকে তাদের চলে যাওয়ার কথা। দু’এক মাসের মধ্যেই তারা নিজেদের বাড়িতে উঠে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাড়ির কাজের জন্য ঘরে ৮ লাখ টাকা রাখা ছিল। সেই টাকা, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শুধু আছিয়া বেগমের পরিবারই নয়, কোয়ার্টারের ৬টি পরিবারের সবকিছুই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রত্যেক পরিবারের ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকার মতো।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতিসহ পুরো বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে।
কারাগার সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হয়। সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কারাগারের প্রধান ফটক পেরিয়ে বাম পাশে কারারক্ষীদের এই কোয়ার্টার।
Leave a Reply