পর্যটনশিল্পে অপার সম্ভাবনার স্থান সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। দিন দিন বেড়েই চলেছে এর গুরুত্ব। প্রতিবছর দেশি-বিদেশিসহ অর্ধলাখেরও বেশি পর্যটকের সমাগম হয় এখানে। এ ছাড়া চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর আর ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু থাকায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটানের মধ্যে চালু রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষ পারাপারও। ফলে এ অঞ্চলকে আরও পর্যটনবান্ধব করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। তাদের উদ্যোগেই এখানে হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু স্কয়ার’।
তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এই বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের এখন প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠছে সুদৃশ্য দুটি পাঁচতলা ভবন। লন্ডন ব্রিজের মতো উভয় ভবনই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে একটি সেতুর মাধ্যমে। মূলত অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তেঁতুলিয়াকে আরও পর্যটনবান্ধব করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, এখন পুরোদমে ভবন দুটির নির্মাণকাজ চলছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অচিরেই দৃশ্যমান হয়ে উঠবে স্থাপনার পুরো অবয়ব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কয়ারের অবকাঠামো সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আবদুল আলীম খান ওয়ারেশী জানান, স্থলবন্দরের কাছেই মহাসড়কের দুই পাশে স্টিল স্ট্রাকচারের দুটি পাঁচতলা ভবন নির্মিত হবে। প্রতিটি ভবনের দৈর্ঘ্য হবে ৩০ ফুট এবং প্রস্থ ৩০ ফুট। প্রথম ভবনের নিচতলায় থাকবে ঐতিহাসিক জাদুঘর। সরকারের উচ্চমহলের অনুমতি নিয়ে সেখানে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিসহ বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে সম্পাদিত সব চুক্তির চিত্র এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্যচিত্র রাখার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলায় থাকবে আবাসিক সুবিধা। পঞ্চম তলায় থাকবে ওয়াচ টাওয়ার ও কফি কর্নার। এখানে পর্যটকদের থাকা-খাওয়াসহ বিনোদনের সুযোগ তৈরি হবে।
দ্বিতীয় ভবনের নিচতলায় থাকবে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সিকিউরিটি ইউনিট। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলায় থাকবে আবাসিক সুবিধা। পঞ্চম তলায় হবে ওয়াচ টাওয়ার ও রেস্তোরাঁ। দুটি ভবনকে সংযুক্ত করবে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের একটি সেতু, যা নির্মিত হবে মাটি থেকে ২৫ ফুট ওপরে। সেতুটির মাঝ বরাবর ৫ ফুট চওড়া একটি রাস্তা রেখে দুপাশে থাকবে দেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর স্টল। সরকারের অনুমোদন পেলে বাংলাদেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানের স্টলও রাখার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু বলেন, বাংলাবান্ধায় জেলা পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কয়ার নির্মাণের মধ্য দিয়ে পর্যটনশিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে তেঁতুলিয়াকে একটি আধুনিক ও পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক পঞ্চগড়ে ঘুরতে আসেন। বিশেষ করে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট দেখতে যান তারা। কিন্তু সেখানে থাকা-খাওয়ার তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। পঞ্চগড়ের পর্যটনশিল্পকে আরও এগিয়ে নিতেই আমরা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি নির্মিত হলে পঞ্চগড়ের পর্যটনশিল্পে নতুনমাত্রা যোগ হবে।
Leave a Reply