মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ গত সোমবার ক্ষমতা দখল করে দেশটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আটক করেছে। দেশটিতে এ ধরনের সেনা পদক্ষেপ এটিই প্রথম নয়। ১৯৮০ সালের পর বেশ কয়েকবার দেশটির সেনা কর্তৃপক্ষ শাসনভার ছিনিয়ে নিয়েছে। সেনাশাসনের আওতায় দেশটির সাধারণ মানুষ কেমন ছিল- এ নিয়ে গতকাল একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করা হয়েছে।
ওয়াই ওয়াই নু নামের একজন জানিয়েছেন, তিনি আতঙ্কের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। তার বয়স যখন ৫ ছিল, সেই সময় তার চোখের সামনে তার বাবাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় নিরাপত্তা বাহিনী। ট্রাকের মধ্যে তাকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বাবা ছিলেন একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং দেশটির নেত্রী অং সান সু চির কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত। তার বাবাকে একমাস পরই ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার সেই দিনের কথা ভুলতে পারেন না ২৫ বছর বয়সী ওয়াই ওয়াই। বিবিসিকে তিনি বলেন, আমি একটা ভয় নিয়ে বেড়ে উঠেছি। শৈশবে আমি সবসময় আতঙ্কে ছিলাম। চারপাশে সবসময় সেনাসদস্যদের টহল ছিল- আর আমার চোখের সামনে শুধু বাবার নিয়ে যাওয়ার ছবি ভেসে উঠত। জাতিগতভাবে ওয়াই ওয়াই একজন রোহিঙ্গা। তার বয়স যখন ১০, সেই সময় তার পরিবার রাজধানী ইয়াঙ্গুনে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। তার কথায়, রাখাইনের চেয়ে এখানে কিছুটা বেশি স্বাধীনতা পাচ্ছি এখন। কিন্তু এখানকার অনেকেই জানেই না সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ভাগ্যে এখন কী ঘটছে।
ফাইও (ছদ্মনাম) নামে একজনের অভিজ্ঞতা আবার অন্য রকমের। রাজধানী ইয়াঙ্গুনেই জন্ম। ২৫ বছর বয়সেও বাইরে কী হচ্ছে তার বড় অংশ কিছুই জানা হয় না তার। কিন্তু ছোটবেলায় কিছু জিনিস সামনে এসেছে। যেমন- আপনি যখন ফোনে কথা বলছেন সেই সময় আপনি ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনতে পাবেন কেউ একজন টেলিভিশনে কথা বলছেন, কিন্তু সেটি ছিল সেনাবাহিনী আপনাকে শুনিয়েছে। এটি ছিল ভীতিকর। কারণ আপনি জন্মগ্রহণ করেছেন এর মধ্যে এবং এর বিকল্প আপনার কাছে ছিল না। আমাদের বাবা-মা আমাদের বলতেন- আমরা যেন ফোনে কথা না বলি। ১৯৯৫ সালে ফাইও জন্মগ্রহণ করেছেন। তার তিন বছর পর সামরিক জান্তা থ্যান শু ক্ষমতা গ্রহণ করে। ফাইও বলেন, ১৯৮৮ সালের ‘বিপ্লবের’ পর তারা সেনাশাসনের চূড়ান্ত অবস্থায় বেড়ে উঠেছে।
৬৭ বছর বয়সী কিয়াও থ্যান ইউনের এখনো মনে আছে ১৯৮৮ সালে সেনা অভ্যুত্থানে কী হয়েছে। সেই সময় তিনি মিন বু শহরে থাকতেন। তাদের কাছে খবর এলো দেশে গোলাগুলি ও সহিংসতা শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় মিন বু ছিল শান্ত। সাধারণ মানুষ প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেন; কিন্তু বাইরে কোনো মতামত দিতেন না। অনেক সরকারি কর্মচারী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন কিন্তু আমার মতো কর্মচারীরা শুধু কাজে যাওয়া-আসা করতাম। আমাদের ভয়ের মধ্যে জীবন কাটাতে বাধ্য করা হতো।
Leave a Reply